পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ঘূর্ণীটান এড়িয়ে চলা জাহাজের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। চুম্বক যেমন লোহাকে টানে ঘুর্ণীজলের স্তম্ভ তেমনি করে জাহাজকে টেনে নেয়। স্তম্ভের ভিতরে ঢুকলে জাহাজের লোকদের আর কিছু করবার উপায় থাকে না। জাহাজ বন্‌বন্ করে ঘরতে থাকে-অনেক সময় জল ছেড়ে শূন্যে উঠে যায়-চারিদিক ভোঁ-ভোঁ শব্দে কানে তালা লেগে যায়, অন্ধকারে আর জলের ঝাপটায় কিছু দেখবার সাধ্য থাকে না।

 তার পর স্তম্ভ যখন ভীষণ শব্দে ফেটে যায় তখন হচ্ছে আসল বিপদ। একেবারে হাজার মণ জল বাজ-পড়ার মতো আওয়াজ করে মাথার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে জাহাজ-টাহাজ সব চুরমার করে দেয়। সমুদ্রের জল তার ধাক্কায় বহুদূর অবধি তোলপাড় হয়ে ওঠে। বহুদুরের জাহাজ পর্যন্ত তার সাংঘাতিক ঢেউয়ে টল্‌মল্ করতে থাকে।

 কিছুদিন আগে আমেরিকার এক সাহেব কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে এক প্রকাণ্ড মোটরে চড়ে একটা বিলের ধার দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি দেখলেন আকাশ থেকে একটা কালো মেঘের মতো কি যেন ঘুরতে ঘুরতে নীচের দিকে নেমে আসল, আর বিলের উপর থেকে খানিকটা জল ছিটকে উঠে তার সঙ্গে মিলে একটা স্তম্ভের মতো হয়ে গেল। দেখতে দেখতে স্তম্ভটা বিলের উপর দিয়ে তেড়ে এসে মোটর গাড়ির উপর পড়ে, গাড়িটাকে সোঁ করে শূন্যে তুলে পাহাড়ের উপর দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিল। গাড়ির আরোহীরা কেউ মরল, কেউ সাংঘাতিক জখম হল আর প্রকাণ্ড গাড়িখানা ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।

 যদি সর্বদাই যখন তখন এরকম বড়-বড়ো জলস্তন্ত দেখা দিত তা হলে সেটা খুবই ভয়ের কথা হত। কিন্তু সৌভাগ্যের বিষয় এই যে এরকম সচরাচর দেখা যায় না। তেমন বড়ো জলস্তম্ভ অতি অল্পই দেখা যায় আর তাও থাকে অতি অল্প সময়।

সন্দেশ-কার্তিক, ১৩২১


আজব জীব

 কি ভাই সন্দেশ, বড়ো যে দেখেও দেখছ না? আমায় চেন না বুঝি? তোমার ঘরের কাছেই আমায় কত দেখেছ তবু পরিচয় জান না? আচ্ছা তা হলে পরিচয় দেই।

 আমায় এখন যেরকম দেখছ আগে কিন্তু সেরকম ছিলাম না। এখন কেমন দুপায়ে ভর দিয়ে চলে বেড়াই; তখন অন্য অন্য জন্তুরা যেমন চার পায়ে চলে আমিও তেমনি করে চলতাম। তোমাদের এই ডাল ভাত মাছ মাংস এ-সব কিছুই খেতে পারতাম না। তখন আমার পায়ে একরকম ধাতুর তৈরি বেড়ি আটকানো ছিল, হাতেও সেইরকম হিল।

 আমাদের বাসা তুমি দেখেছ—কেমন অদ্ভুত বল দেখি? খানিকটা কাঠ আর পোড়মাটি, লোহা বালি আর মাটির গুঁড়ো, এইরকম সব জিনিস দিয়ে আমরা বাসা বানাই। বাসায় ঢুকবার আর বের হবার জন্যে, আলো আর বাতাস আসবার জন্যে বাড়ির গায়ে নানা জায়গায় ফাঁক থাকে, ইচ্ছা করলে সে ফাঁকগুলো বন্ধ করে দেওয়া যায়।

 আমরা অনেকরকম জিনিস খাই। নানারকম ফলমূল শিকড়, এ-সব তো খাই-ই, তার

নানা নিবন্ধ
২৯১