পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

উপর আমাদের প্রধান খাদ্য হচ্ছে নানারকমের ঘাসের বীজ। আমরা সেই-সব যত্ন করে সংগ্রহ করে তা থেকে কতরকমের যে খাদ্য বানাই, শুনলে অবাক হবে। একরকম জন্তু আছে, আমরা তার দুধ খেতে খুব ভালোবাসি। তাই অনেক সময়ে সেইরকম জন্তু ধরে এনে আমাদের বাড়িতে বেঁধে রাখি। একরকম গাছ হয় দেখতে অনেকটা বাঁশের মতো, আমরা তার থেকে রস বার করে সেই রস জমিয়ে খেতে খুব ভালোবাসি।

 আমরা কি পারি জান? কোনো কোনো ফলে লম্বা-লম্বা আঁশ থাকে, সেই আঁশের জট ছাড়িয়ে আঁশগুলোকে পাকিয়ে তা থেকে আমরা নানারকম জাল বুনি। অন্যান্য আঁশাল জিনিস থেকেও এরকম জাল বোনা যায়। পোকার বাসা, জানোয়ারের লোম, কতরকম জিনিস থেকে যে আঁশ সংগ্রহ হয়, আমিও তার সব খবর জানি না। এই আমার গায়ে দেখ-না কতরকম জালের টুকরা জোড়া দিয়া আমার মা কেমন সুন্দর গা-ঢাক্‌নি বানিয়েছেন। এইরকম জালের মধ্যে চাপ চাপ আঁশ ভরে তার উপর শুতে যা আরাম।

 আমাদের মধ্যে নানারকম অদ্ভুত প্রথা দেখতে পাওয়া যায়। যারা আমাদের চাইতে বড়ো তাদের সঙ্গে দেখা হলে আমরা সামনের দিকে ঘাড় বাঁকিয়ে দুটো হাত একসঙ্গে ওঠাই ও নামাই-নাহয় মাটি পর্যন্ত হাত নামিয়ে একেবারে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ি। কেন করি তা আমি বলতে পারি না।

 কি বললে? তবু চিনতে পারছ না? ভাবছ আমি কোথাকার অদ্ভুত জীব? তা নয় গো তা নয়। আমি আফ্রিকার হটেন্‌টট্‌ও নই, মালয় দেশের বনমানুষও নই, আমি নিতান্তই তোমাদের বাঙালির ঘরের ছেলে—সন্দেশের পাঠক। পরিচয়টা ভুল হয়েছে বলছ? আর একটিবার মন দিয়ে পড়ে দেখ, আগাগোড়া সমস্তই ঠিক বলা হয়েছে দেখতে পাবে।

সন্দেশ-বৈশাখ, ১৩০০


বুমেরাং

 এই পৃথিবীতে যারা সভ্য জাতি বলে পরিচিত তাদের সভ্যতার মোটামুটি পরিচয় হচ্ছে এই যে, তারা চাষবাস করতে জানে, আগুনের এবং নানারকম ধাতুর ব্যবহার জানে, নানাকম জিনিসকে নিজের কাজে লাগাতে জানে, পাকা ঘর দালান গড়তে জানে, আর মনটাকে নানারকম জ্ঞানের সন্ধানে নিযুক্ত করতে জানে। এ-সব যারা জানে না তাদের আমরা বলি অসভ্য জাত। এই হিসাবে, পৃথিবীর সবচাইতে অসভ্য জাতিদের নাম করতে হলে অষ্ট্রেলিয়ার আদিম বর্বর জাতির কথা উল্লেখ করতে হয়। তারা কাপড় বানাতে জানে না, ধাতুর ব্যবহার তো দূরের কথা, সামান্য মেটে বাসন পর্যন্ত তৈরি করতে জানে না, চাষবাসের কোনো খবরই রাখে না; কাঁচা মাংস আর বুনো গাছের ফল বা শিকড় খেয়ে ঘুরে বেড়ায়। সামান্য লতাপাতার ছাউনি ছাড়া আর কোনোরকম ঘরবাড়ির খবর রাখে না। এক থেকে দশ পর্যন্ত গুণতে বললে মাথায় তাদের গোল বেধে যায়।

 এমন যে অসভ্য জাত, তারাও কিন্তু একটি বিদ্যায় এমন ওস্তাদ যে, সে বিদ্যা পৃথিবীর

২৯২
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী : ২