পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সেই নরম মাটি জমে সেই হাড়গোড়সুদ্ধ পাথর হয়ে গেছে। মাটি জমে পাথর হতে হয়তো কত লাখ বৎসর লেগেছে, তার পরে কত হাজার বৎসর কেউ তার কথা জানতে পারে নি। এতদিন পরে মানুষ আবার সেই জানোয়ারের সন্ধান পেল। পণ্ডিতেরা সেই পাথর পরীক্ষা করে হয়তো বলবেন এটা অমুক যুগের পাথর। তার পর হাড় পরীক্ষা করে জানোয়ারটার সম্বন্ধেও নানা কথা বলবেন। যদি অনেকগুলো হাড় পাওয়া যায় তবে হয়তো জানোয়ারটার একটা মোটামুটি চেহারাও খাড়া করতে পারবেন।

 এইরকম করে কত অদ্ভুত জানোয়ারের যে খবর পাওয়া গেছে সে কথা ভাবতে গেলে অবাক হতে হয়। প্লীসিওসরাস (অর্থাৎ 'প্রায় কুমির জাতীয়’) জানোয়ারটির গলা সরু আর লম্বা ছিল আর লম্বায় প্রায় পঁচিশ-ত্রিশহাত হলেও মোটের উপর নিরীহ ছিল। আরেকটা ছিল ইকথিয়োসরাস ('মাছ কুমির')। আর দুটো জানোয়ার ছিল মেগালোসরাস আর ইগুয়া নোডন দেখতে ভয়ানক বটে, কিন্তু নিরামিষভোজী, মেগালোসরাস আমিষভোজী। এরা দুজনেই হাতির চেয়ে বড়ো ছিল।

 সেকালের কুমিরদের পিছনের পা দুটার গড়ন সাংঘাতিকরকম মজবুত-লড়ায়ের সময় পিছনের পা দুটাই আক্রমণ কিম্বা আত্মরক্ষার জন্য ব্যবহার করত। এদের নাম টিরানোসরাস অর্থাৎ অত্যাচারী কুমির। এরাও হাতির চেয়ে বড়ো ছিল।

 এরকম আরো কত জানোয়ার সেকালে ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। আমরা যদি তখন বেঁচে থাকতাম তা হলে কি মুশকিল হত বল দেখি? এতগুলো হাতির চেয়ে বড়ো হিংস্র জানোয়ারের মধ্যে আমাদের দশাটা কেমন হত একবার ভেবে দেখো। কয়েক বৎসর আগে, অনেকের বিশ্বাস ছিল যে দক্ষিণ আমেরিকার প্যাটাগোনিয়ার জঙ্গলে সেকালের জন্তু এখনো আছে। একজন সাহেব অনেক লোকজন নিয়ে খুঁজতে গিয়েছিলেন; কিন্তু তাদের দেখা পেলেন না।

সন্দেশ—পৌষ, ১৩২১


রাক্ষুসে মাছ

  বড়ো-বড়ো কুমির হাঙর, তারাই জ্যান্ত মানুষ খায় আমরা তো এই জানি! এক হাত লম্বা নদীর মাছ, তারা যে আবার জানোয়ার দেখলে কামড়ে ধরে এমন কথা তো শুনি নি। আমাদের দেশের নদীতে তো এমন রাক্ষুসে মাছ দেখা যায় না। কিন্তু দক্ষিণ আমেরিকার এমাজন নদীর আশেপাশে এরকম মাছ দেখতে পাওয়া যায়। সে জায়গায় মানুষ যদি জলে, তবে তাকে আধ মিনিট ও জলে থাকতে হয় না, তার মধ্যেই মাছেরা তাকে কামড়িয়ে এমন রক্তারক্তি করে দেয় যে তাকে প্রাণের দায়ে জল ছেড়ে উঠে আসতে হয়। সেদেশের লোকে একে ‘পিরাই’ বলে।

 বুলডগের মতো মুখ মাছটার, তার মধ্যে ছোটো-ছোটো ছুঁচলো দাঁত। একেবারে ক্ষুরের মতো ধারালো। তার উপর মেজাজখানাও চেহারারই উপযুক্ত জলের মধ্যে থেকে এক হাত

জীবজন্তুর কথা
৩০১