পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সেই সাংঘাতিক ল্যাজ চাবুকের মতো ছুটে এসে, আবার এক বাড়িতে তাকে কাদার মধ্যে আছাড় মেরে ফেলতে।

 ব্যাপারটা কি হল, দলের সবাই সেটা ভালো করে বুঝবার আগেই, কুমির তার শিকার মুখে নিয়ে আচ্ছা করে ঝাঁকানি দিয়ে জলের মধ্যে নেমেছে। এদিকে পেকারির দল তেরে এসে দাঁত উঁচিয়ে তারের কাছে গল হয়ে দারিয়ে একটিবার কুমিরের চেহারাটি দেখেই একেবারে চার পা তুলে দে দৌড়। ঐ একমাত্র জানোয়ার যার কাছে পেকারির দল ঘেষতে সাহস পায় না।

 সেদেশের লোকেরা সে পেকারিকে খুব হিসাব করে চলে, তা সহজেই বুঝতে পার। একলা পেলেও কেউ তাকে সহজে ঘাটাতে চায় না; কারণ কাছেই তার দলটি আছে কিনা জানবে কি করে? সুতরাং পেকারির সামনে যদি কখনো পড়, তবে তার কিছু করবার আগে সুবিধা মতো একটি গাছের উপর চড়ে বসাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

সন্দেশ —শ্রাবণ, ১৩২৩


সেকালের বাঘ

 সেকালে এমন সব জন্তু ছিল যা আজকাল আর দেখা যায় না — এ কথা তোমরা নিশ্চয়ই জান। সেকালের চার দাঁতওয়ালা হাতি, ত্রিশ হাত লম্বা কুমির বা হাঁসুলি-পারা তিন শিঙা গণ্ডার, এর কোনোটাই আজকাল পাওয়া যায় না। মাঝে মাঝে গুহা-গহবরে পাহাড়ের গায়ে বা বরফের নীচে, তাদের কংকালের কিছু কিছু চিহ পাওয়া যায়—তা থেকেই পণ্ডিত লোকে বুঝতে পারেন যে, এক সময়ে এই-এইরকম জানোয়ার পৃথিবীতে ছিল। যারা এই-সকল জিনিসের চর্চা করেন, তারা সামান্য এক টুকরা দাঁত দেখে বলতে পারেন —এটা কিরকম জন্তুর দাত, সে আমিষ খায় কি নিরামিষ খায়, ইত্যাদি।

 এবার যে জনোয়ারের কথা বলছি ইংরাজিতে তাকে বলে Sabre-toothed Tiger (অর্থাৎ খড়্গদন্ত বাঘ)। এর কংকাল ইউরোপে, আমেরিকায়, আমাদের দেশে এবং আরো নানা জায়গায় পাওয়া গিয়েছে। এই খড়েগর মতো দাঁত দুটিতে তার কি কাজ হত, সে কথা বলা বড়ো শক্ত। তাছাড়া এই বাঘের চোয়ালের হাড় আজ-কালকার বাঘের মতো মজবুত নয়, সুতরাং তার কামড়ের জোরও কম ছিল। দাত দুটি প্রায় ছয় ইঞ্চি করে লম্বা, তার গায়ে ছুরির মতো ধার—হয়তো তা দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে শিকারের মাংস ছাড়াবার সুবিধা হত। যে জন্তু যেরকম স্থানে যেরকম অবস্থায় বাস কয়ে সে অনুসারে তার চেহারা ও গায়ের রঙ কিছু-না-কিছু বদলিয়ে আসে। বাঘের গায়ে যে কালো কালো দাগ দেখতে পাও তাতেই বুঝতে পারা যায় যে, ঝোপ-জঙ্গলে চলাফিরা তার অভ্যাস আছে - সেখানে বড়ো-বড়ো ঘাসের ঝোপে যখন বাঘমশাই লুকিয়ে থাকেন, তখন সেই গাড়া ঘাসের আলো-ছায়ার সঙ্গে বাঘের হলদে-কালোর ডোরাগুলি এমনিভাবে মিশিয়ে যায় যে হঠাৎ দেখলে বুঝবার জো নেই যে ওখানে ঝোপ ছাড়া আর কিছু

জীবজন্তুর কথা
৩০৫