পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বড়ো তাহাতে সন্দেহ নাই। দক্ষিণ আমেরিকায় যে-সকল বাদুড়ের চিহ্ন পাওয়া গিয়াছে তাহার এক-একটি ডানা মেলিলে পঁচিশ ফুট চওড়া হয়। ইহাদের মাথার উপরে অদ্ভুত এক প্রকাণ্ড শিং ছিল। এই শিংটা তাহার কি কাজে লাগিত তাহা জানি না, কিন্তু ইহাতে তাহার বিদঘুটে চেহারার কোনো উন্নতি হইয়াছিল বলিয়া বোধ হয় না। এত বড়ো জন্তুটা উড়িলে পরে তাহার ডানা ঝাপটাইবার শব্দ নিশ্চয়ই বহু দূর হইতে শোনা যাইত। ইহারা কোনোরূপ শব্দ করিত কিনা বলিতে পারি না কিন্তু আওয়াজ করিলে সেটা খুব সুমিষ্ট হইত কিনা সে বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। ইহাদের মখে নাকি দাঁত থাকিত না, কিন্তু তাহাতেও আশ্বস্ত হইবার বিশেষ কোনো কারণ দেখি না, কারণ ইহার যে ঠোঁট ছিল তাহাতে সাংঘাতিক ধার! সুতরাং তাহার ঠোকর দু-একটা খাইলে আর বেশি খাইবার দরকার হইত না। মোট কথা, এ জন্তুটা যে সেকালেই লোপ পাইয়াছে এটা আমাদের পক্ষে সৌভাগ্যের কথা বলিতে হইবে।

সন্দেশ-ফাগুন, ১৩২৩


সিন্ধু ঈগল

 সমদ্রের ধারে যেখানে টেউয়ের ভিতর থেকে পাহাড়গুলো দেয়ালের মতো খাড়া হয়ে বেরোয়, আর সারা বছর তার সঙ্গে লড়াই করে সমদ্রের জল ফেনিয়ে ওঠে, তারই উপরে অনেক উঁচুতে পাহাড়ের চূড়ায় সিন্ধু ঈগলের বাসা। সেখানে আর কোনো পাখি যেতে সাহস পায় না—তারা সবাই নীচে পাহাড়ের গায়ে ফাটলে ফোকরে বসবাস করে। পাহাড়ের উপরে কেবল সিন্ধু ঈগল-তারা স্বামী-স্ত্রীতে বাসা বেঁধে থাকে।

 ঈগলবংশ রাজবংশ-পাখির মধ্যে সেরা। সিন্ধু ঈগলের চেহারাটি তার বংশেরই উপযুক্ত—মেজাজটিও রাজারই মতো। সিংহকে আমরা পশুরাজ বলি—সুতরাং ঈগলকেও পক্ষীরাজ বলা উচিত। কিন্তু তা আর বলবার জো নেই কারণ রূপকথার আজগুবি গল্পে লেখে, পক্ষীরাজ নাকি একরকম ঘোড়া। যাহোক—শুনতে পাই রাজারা নাকি মৃগয়া করতে ভালোবাসেন। তা হলে সে হিসাবেও সিন্ধু ঈগলের চালের কোনো অভাব নেই। চিল কাক সাঁচান শকুন সবাই মরা মাংস খায়- কাজেই সেরকম খাওয়া যতক্ষণ জোটে ততক্ষণ তাদের আর শিকার করা দরকার হয় না। সিন্ধু ঈগলের স্বভাবটি ঠিক তার উলটো—যতক্ষণ শিকার জোটে ততক্ষণ সে মরা জানোয়ার পেলেও তা ছোয় না। কিন্তু একটি তার বদভ্যাস আছে, সেটাকে ঠিক রাজার মতো বলা যায় না। সেটি হচ্ছে অন্যের শিকার কেড়ে খাওয়া।

 সমুদ্রের ধারে ছোটো-বড়ো কতরকম পাখি—তারা সবাই মাছ ধরে খায়। নিতান্ত ছোটো যারা তারা ধরে ছোটো-ছোটো মাছ-সে-সব মাছের উপর সিন্ধু ঈগলের কোনো লোভ নাই। কিন্তু বড়ো-বড়ো গাংচিল আর মেছো চিলগুলো যে-সব বড়ো-বড়ো মাছ জল থেকে টেনে তোলে তার দু-চারটা যে মাঝে মাঝে সিন্ধু ঈগলের পেটে যায় না, এমন নয়। সমুদ্রের ধারে

জীবজন্তুর কথা
৩১১