সে এক দেখিবার মতো জিনিস। লক্ষ লক্ষ ইদুর একেবারে পাহাড় কালো করিয়া নামিতে থাকে। কোথায় যাইবে, কোথায় খাবার মিলিবে সে খবর কেহ জানে না অথচ একেবারে নিরুদ্দেশ অন্ধের মতো সকলে হুড়াহুড়ি করিয়া বাহির হয়। বাধা মানে না, বিপদ মানে না, সব হড়হড় করিয়া অগ্রসর হইতে থাকে। ঠেলাঠেলিতে পায়ের চাপে কত হাজার হাজার মারা পড়ে, অনাহারে পথের ধারে আরো কত হাজার মরিয়া থাকে। আর নদীর স্রোতে, সমুদ্রের ঢেউয়ে কত যে প্রাণ হারায়, বুঝি তাহার আর সংখ্যা হয় না। যত রাজ্যের মাংসাশী শিকারী পাখি তখন চারিদিক হইতে আকাশ অন্ধকার করিয়া আসিতে থাকে। এমনি করিয়া অজস্র লেমিং বিনষ্ট হইবার পর যে কয়টি অবশিষ্ট থাকে, তাহারাই আবার আর কোনোখানে নুতন করিয়া বংশসৃষ্টির সূত্রপাত করে। ক্রমে আবার সেই সংখ্যাবৃদ্ধি, সেই দুর্ভিক্ষ আর সেই প্রলয়কাণ্ড।
ছোটোর কথা বলিলাম, এখন আরো ছোটোর কথা বলিয়া শেষ করি। পিঁপড়ার যে বাসা ছাড়িয়া নুতন দেশের সন্ধানে বাহির হয়, ইহা সকল দেশেই দেখা যায়। এ বিষয়ে সকলের চাইতে ওস্তাদ যে পিঁপড়া তাহার নাম ড্রাইভার পিপড়া। আফ্রিকার জঙ্গলে ইহারা যখন ঠিক সৈন্যদলের মতো পরিষ্কার সার বাঁধিয়া চলিতে থাকে, তখন জানোয়ার মাত্রেই তাহাকে দেখিয়া পথ ছাড়িয়া পালায়।
আর পঙ্গপালের কথা কে না জানে? যেদেশের উপর দিয়া পঙ্গপাল যায়, সেদেশের চাষারা মাথায় হাত দিয়া হায় হায় করিতে থাকে। সেদেশে শস্য আর গাছের পাতা বড়ো বেশি অবশিষ্ট থাকে না। দশ-বিশ মাইল লম্বা পঙ্গপালের দল তো সচরাচরই দেখা যায়। এক-একটা দল এত বড়ো থাকে যে মাথার উপর দিয়া সপ্তাহখানেক উড়িয়াও তাহার শেষ হয় না। আফ্রিকায় এইরকম বড়ো-বড়ো কাণ্ড প্রায়ই ঘটিয়া থাকে। সেখানে পঙ্গপালের চাপে পড়িয়া টেলিগ্রাফের তার ছিড়িয়া পড়ে, পুকুর বুজিয়া যায়, ড্রেন আটকাইয়া যায়, এমন-কি, রেলগাড়ি বন্ধ হইয়া যায়, এমনও দেখা গিয়াছে।
তোমরা সকলেই জান যে এমন সময় ছিল যখন এই পৃথিবীতে মানুষ ছিল না। শুধু মানুষ কেন, জীবজন্তু গাছপালা কোথাও কিছু ছিল না। তখন এই পুথিবী তপ্ত কড়ার মতো গরম ছিল বৃষ্টির জল তাহার উপর পড়িবামাত্র টগবগ করিয়া ফুটিয়া উঠিত। তার পর যখন পৃথিবী ক্রমে ঠাণ্ডা হইয়া আসিল, তখন তাহাতে অল্পে অল্পে গাছপালা জীবজন্তু দেখা দিতে লাগিল।
জীবজন্তু আসিবার অনেক হাজার হাজার বৎসর পরেও মানুষের কোনো অস্তিত্ব দেখা যায় নাই। আজকাল আমরা যে-সকল জানোয়ার সচরাচর দেখিতে পাই—এগুলিও সব ‘আধুনিক' কালের—অর্থাৎ সেই অতি প্রাচীন কালের জানোয়ারেরা সকলেই এখন লোপ