পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কয়েকবার ক্রমাগত অস্ত্রের ব্যবহার করলে মাছটা আপনা থেকেই কেমন নির্জীব হয়ে পড়ে—তখন আর তার বিদ্যুতের তেজ থাকে না। কিন্তু খানিকক্ষণ বিশ্রাম করলে আবার তার তেজ ফিরে আসে। সব সময়ে যে ইচ্ছা করে সে খামকা অস্ত্র ব্যবহার করে, তা নয়। কোনোরকমে ভয় পেলে বা চমকালেও তার গায়ে বিদ্যুৎ খেলে।

 এরকম বৈদ্যুতিক শক্তি আরো কোনো কোনো মাছের ও অন্য জলজন্তুর মধ্যেও দেখা যায়। আফ্রিকায় মাগুর জাতীয় একরকম মাছ আছে, তারও তেজ বড়ো কম নয়।

 তার সমস্ত শরীরটাই যেন বিদ্যুতের কোষে ঢাকা। একটা চৌবাচ্চায় অন্যান্য মাছের সঙ্গে একে রাখলে তবে এর মেজাজের পরিচয় পাওয়া যায়। দুদিন না যেতেই দেখবে যে আর সব মাছকে মেরে সে সাবাড় করেছে। আফ্রিকার অরিবেরা এর নাম বলে ‘রাদ' অর্থাৎ বজ্র মাছ।

সন্দেশ-আষাঢ়, ১৩২৪


তিমির খেয়াল

  রুশিয়ার দুরন্ত শীতে মানুষ যখন নির্জন পথে চলাফিরা করে তখন অনেক সময় নেকড়ে বাঘের পাল তাহাদের সঙ্গে সঙ্গে চলিতে থাকে। তাহারা যে বন্ধুভাবে চলে না, তা অবশ্য বুঝিতেই পার। তাহাদের দূরে রাখিবার জন্য মানুষে অস্ত্রশস্ত্র বন্দুক লইয়া পথে বাহির হয় এবং পারতপক্ষে একলা কেহ সে-সকল পথে যাওয়া আসা করিতে চায় না।

 সমুদ্রের পথে যখন বড়ো-বড়ো জাহাজ চলাফিরা করে তখনো অনেক সময় দেখা যায়, তাহাদের আশেপাশে নানা জাতীয় মাছ ও হাঙর ঘুরিয়া বেড়ায়। জাহাজ হইতে কত জিনিস কত সময়ে জলে ফেলা হয়, তাহার মধ্যে তরকারির খোসা মাংসের বা হাড়ের টুকরা, নষ্ট খাবার প্রভৃতি কিছু জলে পড়িবামাত্র তাহারা কাড়াকাড়ি করিয়া সব খাইয়া ফেলে। ঐ খাবারের লোভেই তাহারা জাহাজের সঙ্গে সঙ্গে চলে।

 কেবল মাছ কেন, কত পাখিকেও অনেক সময় দেখা যায় মাঝসমুদ্রে জাহাজের সঙ্গে সঙ্গে শত শত মাইল উড়িয়া চলিতেছে। তাহাদের অনেকে আসে কেবল কৌতুহল মিটাইবার জন্য, অনেকে আসে খাইবার লোভে অথবা বিশ্রামের আশায়। কিন্তু খামকা বিনা কারণে কেহ জাহাজের সঙ্গে সঙ্গে চলে না।

 কিন্তু নিউজিল্যাণ্ডের উপকূলের কাছে এক জায়গায় ছোটোখাটো—অর্থাৎ মোটে বারো হাত লম্বা একটি তিমি আছে, তাহার বাড়ির কাছ দিয়া যত জাহাজ চলাফিরা করে সকলের সঙ্গেই সে আত্মীয়তা করিতে আসে। এইরকম সে কত বছর করিয়া আসিতেছে, কেন করে তাহা কেহ জানে না। জাহাজ হইতে যে-সকল খাবার জিনিস জলে ফেলা হয় তাহার কোনোটাই তাহার খাদ্য নয়-জাহাজের লোকেদের দ্বারা তাহার কোনোরকম উপকার হওয়াও সম্ভব নয়—অথচ সে প্রত্যেক জাহাজের সঙ্গে একবার খানিক দেখা না করিয়া ছাড়ে না। শুধু দেখা নয়, আধ ঘণ্টাখানেক অনায়াসে জাহাজের সঙ্গে সঙ্গে সে এমনভাবে চলে যেন

৩২০
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী: ২