পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কপালজোড়া বড়ো-বড়ো চোখ, আর রোগী রোগা কাঠির মতো হাত-পা। গাছের আড়াল থেকে হঠাৎ উঁকি মেরেই রবারের মতো নিঃশব্দে লাফ দিয়ে আবার দশ হাত দূর থেকে উঁকি মারা—এই হচ্ছে এর চাল-চলনের ধরন। কারও কোনো অনিষ্ট করে না, কেবল পোকামাকড় খেয়ে থাকে অথচ লোকে মিছামিছি তাকে ভূতের মতো ভয় করে। তার একটা কারণ সে নিশাচর।

 আমাদের পুরাণে রাক্ষসদের নামও নিশাচর। তারাও নাকি দিনের আলোর চাইতে রাত্রের অন্ধকারটাই বেশি পছন্দ করে। আর চোর ডাকাত যারা পরের বাড়িতে সিঁদ কেটে ঘুমন্ত মানুষের সর্বনাশ করে, তাদেরও ‘শিকার’ করবার সুবিধা হয় রাত্রে। আজকালকার সভ্য মানুষ রাতকে দিন করে রাখে। রাত্রেও হাজার আলো জ্বালিয়ে দিয়ে তার কলকারখানা, রেল, স্টিমার চালাতে হয়। সুতরাং মাঝে মাঝে ভদ্র মানুষকেও কাজ কর্মের জন্য নিশাচর হতে হয়। ভোরবেলা যে খবরের কাগজটি পড়, তার জন্যে যে কত লোকের রাত জেগে খাটতে হয় তা কখনো ভেবে দেখেছ কি? আর রেলে সিটমারে ড্রাইভার গার্ড প্রভৃতি কতজনকে যে দিনের পর দিন রাতমজুরি খাটতে হয়, তারাও একরকম নিশাচর বৈকি।

সন্দেশ —মাঘ, ১৩২৫


বেবুন

 যে-সব বানরের মুখ কুকুরের মতো লম্বাটে, যার চার পায়ে চলে, যাদের ল্যাজ বেঁটে আর গালের মধ্যে থলি আর পিছনের দিকটায় কাঁচা মাংসের মতো টিপি, তাদের নাম বেবুন। বেবুনের অসিল বাড়ি আফ্রিকায়, কেউ কেউ এশিয়াতেও থাকে। বেবুন বংশের অনেক শাখা- হলদে বেবুন, লালমুখো বেবুন, ঝুঁটিওয়ালা কালো বেবুন, চিমুখ সঙ-বেবুন বা ম্যাণ্ড্রিল, চাকমা বেবুন, ড্রিল বেবুন ইত্যাদি। কিন্তু সকলেরই মুখের ভঙ্গি চাল-চলন ও স্বভাব প্রায় একইরকম। উঁচু উচু ধারালো দাঁত, বদ্খত মেজাজ আর তার চাইতেও বদখত চেহারা। সমস্ত জানোয়ারদের মধ্যে বিদঘুটে চেহারা যদি কারও থাকে তবে সে ঐ ম্যানড্রিলের। টকটকে লাল নকি, খাঁজকাটা নীল গাল, ভেংচিকাটা কুটি মুখ, সব মিলে অপূর্ব চেহারাখানা হয়।

 আফ্রিকার পাহাড়ে জঙ্গলে বেবুনেরা দল বেঁধে লুকিয়ে থাকে। বল, বুদ্ধি, ভরসা, এই তিন জিনিসের জোরে সে নীচের জমিতে নেমে এসে চাষার ক্ষেতের উপর অত্যাচার করে ফল শস্য খেয়ে পালায়। তাদের দল বাঁধবার কায়দা, আর পথঘাট পাহারা দেবার ব্যবস্থা এমন চমৎকার, আর এমন হঠাৎ এসে লুটপাট করে তারা ফস্ করে পালায় যে, চাষারা তাদের সঙ্গে কিছুতেই পেরে ওঠে না। পালাবার সময় বেবুনেরা কখনো দলের কাউকে ফেলে যায় না- যদি একজন বিপদে পড়ে অমনি পালের গোদারা তাকে সাহায্য করবার জন্য তেড়ে আসে। একবার একটা বাচ্চা বেবুনকে কতগুলো কুকুরে ঘেরাও করে ফেলেছিল, কিন্তু একটা ধাড়ি বেবুন এসে সেই কুকুরের দলের মধ্যে ঢুকে, এমনি দু-তিন ভেংচি দিয়ে তাদের

৩৫৬
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী : ২