পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৩৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গো মানে দিক, গো মানে ভূ-পৃথিবী, গো মানে স্বৰ্গ, গো মানে কত কি। সুতরাং এটা সাধন করলে গো বললেই মনে হবে পৃথিবী, আকাশ, চন্দ্র, সূর্য, ব্রহ্মাণ্ড । ‘রু মানে কি ? রব রাব রােত রোধন কর্ণেরেীতি কিমপিশনৈবিচিত্ৰং’ , ‘রু মানে শব্দ । এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অব্যক্ত মর্মর শব্দ বিশ্বের সমস্ত সুখ দুঃখ ক্লন্দন—সব ঘুরতে ঘুরতে ছন্দে ছন্দে বেজে উঠছে—মিউজিক অত দি সফীয়ার্স—দেখুন একটা সামান্য শব্দ দোহন করে কি অপূর্ব রস পাওয়া যাচ্ছে। আমার শব্দার্থ খণ্ডিকায় এইরকম দেড়-হাজার শব্দ আমি খণ্ডন করে দেখিয়েছি । গোরুর সূত্রটা বল তো হে । খণ্ডিত গোধন মণ্ডল ধরণী শবদে শবদে মস্থিত অরণী, ত্রিজগৎ যজ্ঞে শ্বাশত স্বাহf— মন্দিত কলকল ক্রন্দিত হাহা । স্তস্তিত সুখ দুখ মন্থন মোহে প্ৰলয় বিলোড়ন লটপট লোহে । মৃত্যু ভয়াবহ হম্বা হস্কা রেীরব তরণী তুহু জগদম্বা শ্যামল স্নিগ্ধানন্দন বরণী খণ্ডিত গোধন মণ্ডল ধরণী 13이5| 1 ভবদুলাল। ঐ গোরুর কথা যা বললেন—আমি দেখেছি মহিষেরও ঠিক তাই। জয়রামের মহিষ একবার আমায় তাড়া করেছিল—তার পর যেই না ও তো মেরেছে আমনি দেখি সব বোবো করে ঘরছে । তখন মনে হল—চক্ৰবৎ পরিবর্তম্ভে দুঃখানি চ সুখানি চ । আচ্ছা আপনারা ঐ সমীক্ষা-টমীক্ষা করেন না ? শ্ৰীখণ্ড। ওগুলো মশায়, করে করে বুড়ো হয়ে গেলাম । আসল গোড়াপত্তন ঠিক না হলে ও-সবে কিছু হয় না। ওদের খণ্ড খণ্ড আর আমাদের শব্দথ-খণ্ডন—দুটোই দেখলেন তো ? আসল কথা ওদের মতলবটা হচ্ছে একেবারে ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাবেন । খণ্ড সাধন হতে না হতেই ওরা এক লাফে আগ ডালে গিয়ে চড়ে বসতে চান । তাও কি হয় কখনো ? নবীন। দেখুন, এরা কিছু শুনবে বলে আশা করে আছে । আপনি এদের কিছু বলুন । ভবদুলাল । বেশ তো, দেখ বালকগণ, চলচিত্তচঞ্চরি বলে আমার একখনো বড়ো বই হবে-ডবল ডিমাই ৭০০ কি ৮oo পৃষ্ঠা— দামটা এখনো ঠিক করি নি— একটু কম করেই করব ৬াবছি--আচ্ছা, চার টাকা করলে কেমন হয় ? একটু বেশি হয়, না ? আচ্ছা ধরুন ৩llo টাকা ? ঐ বইয়ের মধ্যে নানারকম ভালো ভালো কথা লেখা থাকবে । যেমন মনে কর, এই এক জায়গায় আছে—চুরি করা মহাপাপ—যে না বলিয়া পরের দ্রব্য গ্রহণ করে তাহাকে চোর বলে ; তোমরা না বলে কখনো পরের জিনিস নিয়ো না । তবে অবিশ্যি সব সময় তো আর বলে নেওয়া যায় না । যেমন, আমি একবার একটি ভদ্রলোককে 800 বললাম, মশায় আপনার সোনার ঘড়িটা আমায় দেবেন ? সে বলল, “না দেব না । ছোটোলোক ! আমরা ছেলেবেলায় একটা বই পড়েছিলাম তার নাম মনে নেই—তার মধ্যে একটা গল্প ছিল তার সবটা মনে পড়ছে না-ভূবন বলে একটা ছেলে তার মাসির কান কামড়ে দিয়েছিল । মনে কর তার নিজের কান তো নয়—মাসির কান। তবে না বলে কামড়ে নিন কেন ? এর জন্য তার কঠিন শাস্তি হয়েছিল । শ্ৰীখণ্ড । আচ্ছা আজ এ পর্যন্তই থাক। আবার আসবেন তো ? ভবদুলাল। আসব বৈকি ! রোজ আসব। এই তো আজকেই আমার সতেরো পৃষ্ঠা লেখা হয়ে গেল । এ রকম হস্তাখানেক চললেই বইখানা জমে উঠবে। আচ্ছা আজ আসি । [ ওন-ওন গান করিতে-করিতে ভবদুলালের প্রস্থান ) চতুথ দৃশ্য সামা-সিদ্ধান্ত সভাগৃহ। ঈশান, নিকুঞ্জ, জনর্দিন ও সোমপ্রকাশ উপবিচট । সত্যবাহনের প্রবেশ । জনদিন । তার পর সেদিন ওখানে কি হল ? নিকুঞ্জ । হ্যা, আপনি কদিন আসেন নি । আমরা শোনবার জন্য ব্যস্ত হয়ে আছি । সত্যবাহন ৷ হবে আর কি, হ ঃ ! এ কথা ভাবতেও কচট হয় যে শ্ৰীখণ্ডবাবু একদিন আমাদেরই একজন ছিলেন । আজ আমাদের সংস্পর্শে থাকলে তার কি এমন দশা হত ? সামান্য ভদ্রতা পর্যন্ত ওরা ভুলে গেছেন । ঈশান। ভবদুলালবাবুকে ওখানেই রেখে এলেন নাকি ? সত্যবাহন । তার কথা আর বলবেন না । তিনি তার গুরুর নামটি একেবারে ডুবিয়েছেন। কি বলব বলুন, তার সামনে শ্ৰীখণ্ডবাবু আমায় বার-বার কিরকম দারুণভাবে অপমান করতে লাগলেন—উনি তার বিরুদ্ধে টু শব্দটি পর্যন্ত করলেন না—উলটে বরং ওদের সঙ্গেই নানারকম হাদ্যতা প্রকাশ করতে লাগলেন । নিকুঞ্জ । ছি, ছি, ছি, এ একেবারে অমর্তনীয় । সোমপ্রকাশ । দেখুন কিসে যে কি হয় তা কি কেউ বলতে পারে? আমরা অসহিষ্ণু হয়ে ভাবছি ভবদুলালবাবু আমাদের ত্যাগ করেছেন—আমি বলি কে জানে ?—হয়তো অলক্ষিতে আমাদের প্রভাব এখনো তার উপর কাজ করছে । সত্যবাহন । ও-সব কিছু বিশ্বাস নেই হে--সামান্য বিষয়ে যে খাটি ও তে জাল চিনতে পারে না—তার থেকে কি আর আশা কর-ত বল ? ঈশান (গান) কিসে যে কি হয় কে জানে ? কেউ জানে না, কেউ জানে না যার কথা সে বুঝেছে সে জানে। {} বাহিরে পদশব্দ ও গান গাহিতে-গাহিতে ভবদুলালের প্রবেশ–টুইস্কিল-টুইস্কিল-এর সুরে-ভব ভয় তুতি ভাবনা প্রভৃতি সুকুমার সমগ্র রচনাবলী । ২