পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তারপরে পুছিলাম সরকারী মজুরে
তামাম মুলুক সে ত বাৎলায় 'হুজুরে'
বেঙাবাদ বরাকর , ইদিকে পচম্বা ,
উদিকে পরেশনাথ ,পাড়ি দাও লম্বা ;
সব তার সড়গড় নেই কোন ভুল তায় -
'কুলিকাতা কাঁহা' বলি সেও মাথা চুলকায় !
অবশেষে নিরুপায় মাথা যায় ঘুলিয়ে '
'টাইম টেবিল' খুলি দেখি চোখ বুলয়ে ।
সেথায় পাটনা পুরী গয়া গোমো মাল্‌দ
বজবজ দমদম হাওড়া ও শ্যালদ -
ইত্যাদি কত নাম চেয়ে দেখি সামনেই
তার মাঝে কোন খানে কলিকাতা নাম নেই !!
-সব ফাঁকি বুজ্‌রুকী রসিকতা -চেষ্টা !
উদ্দেশে 'শালা ' বলি গাল দিনু শেষটা।-
সহসা স্মৃতিতে যেন লাগিল কি ফুৎকার
উদিল কুমড়া হেন চাঁদপানা মুখ কার!
আশে পাশে ঢিপি ঢুপি পাহাড়ে পুঞ্জ,
মুখ চাঁচা ময়দান, মাঝে কিবা কুঞ্জ !
সে শোভা স্মরণে ঝরে নয়নের ঝরনা ;
গৃহিনীরে কহি 'প্রিয়ে !মারা যাই ধর না ।
তার পরে দেখি ঘরে অতি ঘোর অনাচার -
রাখে না কো কেউ কোন তারিখের সমাচার !
তখনি আনিয়া পাঁজি দেখা গেল গণিয়া,
চায়ের সময় এল একেবারে ঘনিয়া !
হায়রে সময় নেই, মন কাদে হতাশে-
কোথায় চায়ের মেলা! মুখশশী কোথা সে !
স্বপন শূকায়ে যায় আধারিয়া নয়নে ,
কবিতায় গলি তাই গাহি শোক শয়নে।

হোমভিলা-__বারগণ্ডা, গিরিধি
৮৯২২
(মিসেস এস. কে, দৃত্তকে লেখা )


সম্পাদকের দশা

সম্পাদকীয়

একদা নিশীথে এক সম্পাদক গোবেচারা ।
পোঁটলা পুঁটলি বাঁধি হইলেন দেশছাড়া ।।
অনাহারী সম্পাদকী হাড়ভাঙা খাটুনি সে ।
জানে তাহা ভুক্তভোগী অপরে বুঝিবে কিসে ?
লেখক পাঠক আদি সকলেরে দিয়া ফাঁকি ।
বেচারী ভাবিল মনে- বিদেশে লুকায়ে থাকি ।।
এদিকে ত ক্রমে ক্রমে বৎসরেক হল শেষ ।
'নোটিশ' পড়িল কত 'সম্পাদক নিরুদ্দেশ' ।।
লেখক পাঠকদল রুষিয়া কহিল তবে ।
জ্যান্ত হোক মৃত হোক ব্যাটারে ধরিতে হবে ।।
বাহির হইল সবে শব্দ করি 'মার মার' ।
-দৈবের লিখন, হায়, খণ্ডাইতে সাধ্য কার ।।
একদা কেমনি জানি সম্পাদক মহাশয় ।
পড়িলেন ধরা- আহা দুরদৃষ্ট অতিশয় ।।
তারপরে কি ঘটিল কি করিল সম্পাদক ।
সে সকল বিবরণে নাহি তত আবশ্যক ।।
মোট কথা হতভাগ্য সম্পাদক অবশেষে ।
বসিলেন আপনার প্রাচীন গদিতে এসে ।।
(অর্থাৎ লেখকদল লাঠৌষধি শাসনেতে ।
বসায়েছে তারে পুনঃ সম্পাদকী আসনেতে ।।)
ঘুচে গেছে বেচারীর ক্ষণিক সে শান্তি সুখ ।
লেখকের তাড়া খেয়ে সদা তার শুষ্কমুখ ।।
দিস্তা দিস্তা পদ্য গদ্য দর্শন সাহিত্য প'ড়ে ।
পুনরায় বেচারির নিত্যি নিত্যি মাথা ধরে ।।
লোলচর্ম অস্থি সার জীর্ণ বেশ রুক্ষ্ণ কেশ ।
মুহূর্ত সোয়াস্তি নাই- লাঞ্ছনার নাহি শেষ ।।

সন্দেশ ফ্লাগুন, ১৩৩৯