পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৃতজ্ঞতা ভরে প্রণাম করি । দেশের দুর্গতি সকলখানে হেরিয়া বাজিল রাজার প্রাণে । কত অসহায় অবোধ নারী সতীত্বের নামে সকল ছাড়ি, কেহ স্ব-ইচ্ছায়, কেহ-বা ভয়ে, শাসনে-তাড়নে পিষিত হয়ে, পতির চিতায় পুড়িয়া মরে— শুনি কাদে প্রাণ তাদের তরে । নারীদুঃখ নাশ করিল পণ, ঘুচিল নারীর সহমরণ। নিষ্কাম করম-যোগীর মতো দেশের কল্যাণ সাধনে রত, নানা শাস্ত্রবাণী করে চয়ন, দেশ-দেশান্তের ঋষিবচন ; পশ্চিমের নব জ্ঞানের বাণী দেশের সমুখে ধরিল আনি । কিরাপতে পুন এ ভারতভবে ব্ৰহ্মজ্ঞান কথা প্রচার হবে, নিয়ত যতন তাহারি তরে, কত শ্রম কত প্রয়াস করে । তর্ক আলোচনা, কত বিচার কত গ্রন্থ রচি করে প্রচার ; —ব্রুমে বিনাশিতে জড়-ধরম ‘ব্রহ্ম সমাজের হল জনম | শুনে দেশবাসী নুতন কথা, মুরতিবিহীন পূজার প্রথা । উপাসনা-গৃহ দেখে নুতন যেথায় স্বদেশী-বিদেশী জন শূদ্র দ্বিজ আদি মিলিয়া সবে নিবিচারে সবে আসন লভে । মহাপুরুষের বিপুল শ্রমে দেশে যুগান্তর আসিল ক্ৰমে । স্বদেশের তরে আকুল প্রাণ প্রবাসেতে রাজা করে প্রয়াণ । বিবিধ কবিতা সেথায় সুদূর বিলাতে হায় অকালেতে রাজা ত্যজিল কায় । অসমাপ্ত কাজ রহিল পড়ে, ফিরে যায় লোকে নিরাশা ভরে , একে একে সব যেতেছে চলে-- ভাসে রামচন্দ্র ২ নয়নজলে । রাজার জীবন নিয়ত সমরি’ উপাসনা-গৃহে রহে সে পড়ি, নিয়ম ধরিয়া পূজার কালে নিষ্ঠাভরে সেথা প্রদীপ জ্বালে। একা বসি ভাবে, রাজার কাজ এমন দুদিনে কে লবে আজ ? ধনী যুবা এক শ্মশান ঘাটে একা বসি তার রজনী কাটে । অদূরে অন্তিম শয়নোপরি দিদিমা তাহার আছেন পড়ি, সমুখে পূর্ণিমা গগনতলে, পিছনে মশানে আগুন জ্বলে, তাহারি মাঝারে নদীর তীরে হরিনাম ধ্বনি উঠিছে ধীরে । একাকী যুবক বসিয়া কৃলে সহসা কি ভাবি আপনা ভুলে । প্রসন্ন আকাশ চাদিম রাতি ধরিল অপুর্ব নুতন ভাতি, তুচ্ছ বোধ হল ধন-বিভব বিলাস বাসনা আসার সব, অজানা কি যেন সহসা সমরি পলকে পরান উঠিল ভরি | আর কি সে মন বিরাম মানে ? গভীর পিপাসা জাগিল প্রাণে । কোথা শান্তি পাবে ব্যাকুল তুষা শুধায় সবারে না পায় দিশা ।