পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৪৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

‘সাক্ষী রহ চন্দ্র সূর্য লোকে লোকান্তরে এই জন্মে সত্যব্রত বিবাহ না করে। শুনিয়া অদ্ভুত বাণী ধন্য কহে লোকে স্বর্গ হতে পুষ্পধারা ঝরিম পলকে। সেই হতে সত্যব্রত খ্যাত চরাচরে ভীষণ প্রতিজ্ঞাবলে ভীম নাম ধরে। ঘূচিল সকল ব্যথা, আনন্দিত চিতে সত্যবতী রানী হয় হস্তিনাপুরীতে। ক্রমে হলে বর্ষ গত শান্তনুর ঘরে জন্ম নিল নব শিশু, সবে সমাদরে। রাখিল বিচিত্রবীর্য নামটি তাহার শান্তনু মরিল তারে দিয়া রাজ্যভার। অকালে বিচিত্রবীর্য মুদিলেন আঁথি। পাণ্ডু আর ধুতরাষ্ট্র দুই পুত্র রাখি।


মহাভারত-আদিপর্ব


হস্তিনায় চন্দ্রবংশ কুরুরাজকুল রাজত্ব করেন সুখে বিক্রমে অতুল। সেই কুলে জন্মি তবু দৈববশে হায়। অন্ধ বলি ধৃতরাষ্ট্র রাজ্য নাহি পায়। কনিষ্ঠ তাহার পাণ্ডু, রাজত্ব সে করে, পাঁচটি সন্তান তার দেবতার বরে। জ্যেষ্ঠপুত্র যুধিষ্ঠির ধীর শান্ত মন ‘সাক্ষাৎ ধর্মের পুত্র’ কহে সর্বজন। দ্বিতীয় সে মহাবলী ভীম নাম ধরে, পবন সমান তেজ পবনের ঝরে। তৃতীয় অর্জুন বীর, ইন্দ্রের কৃপায় রাপেগুণে শৌর্যেবীর্যে অতুল ধরায়। এই তিন সহোদর কুন্তীর কুমার, বিমাতা আছেন মাদ্রী দুই পুত্র তার নকুল ও সহদেব সুজন সুশীল এক সাথে পাঁচজনে বাড়ে তিল তিল। অন্ধরাজ ধৃতরাষ্ট্র শতপুত্র তার, অভিমানী দুর্যোধন জ্যেষ্ঠ সবাকার। পাণ্ডবেরা পাঁচ ভাই নষ্ট হয় কিসে, এই চিন্তা করে দুষ্ট জুলি হিংসাবিষে। হেনকালে সর্বজনে ভাসাইয়া শোকে মাদ্রীসহ পাণ্ডুরাজা যায় পরলোকে। ‘পাণ্ডু গেল, মনে মনে ভাবে দুর্যোধন, “এইবারে যুধিষ্ঠির পাবে সিংহাসন! ইচ্ছা হয় এই দণ্ডে গিয়া তারে মারি

ভীমের ভয়েতে কিছু করিতে না পারি। আমার কৌশলপকে ভীম যদি মরে অনায়াসে যুধিষ্ঠিরে মারি তার পরে। কুচক্র করিয়া তবে দুষ্ট দুর্যোধন। নদীতীরে উৎসবের করে আয়োজন—একশত পাঁচ ভাই মিলি একসাথে আমোদ আহাদে ভোজে মহানন্দে মাতে। হেন ফাঁকে দুর্যোধন পরম যতনে বিষের মিষ্টান্ন দেয় ভীমের বদনে। অচেতন হল ভীম বিষের নেশায় সুযোগ বুঝিয়া দুষ্ট ধরিল তাহাৱা গোপনে নদীর জলে দিল ভাসাইয়া কেহ না জানিল কিছু উৎসবে মাতিয়া॥ এদিকে নদীর জলে | ডুবিয়া অতল তলে ভীমের অবশ দেহ, কেমনে জানে না কেহ, কোথায় ঠেকিল শেষে বাসকী নাগের দেশে। ভীমের বিশাল চাপে •lাগের বসতি কঁপে। দেহভারে কত মরে, কত পলাইল ডরে কত নাগ দলে দলে ভীমেরে মারিতে ঢলে সংশিয়া ভীমের গায় মহাবিষ চলে তাহা। অদ্ভুত ঘটিল তাহে ভীম চক্ষু মেলি চাহে বিয়ে হয়ে বিষক্ষয় মুহূর্তে চেতনা হয়, দেখে ভীম চারিপাশে নাগের ঘেরিয়া আসে। দেখিয়া ভীষণ রাগে ধরি শত শত না। চর্ণ করে বাহুবলে, হভিয়ে না। দুশো ছুটে যায় হাহাকারে বাসক রাডার দ্বারে। বাসুকী কহেন, “শোনো আর ভয় • • কোণে, তুষি তারে সুবচনে আনে। হেথা সযতনে। রাজার আদেশে তবে আবার ফিরিয়া সবে করে গিয়া নিবেদন বাসুকীর নিমন্ত্রণ। শুনি ভীম কুতুহলে রাজার পুরীতে চলে, সেথায় ভরিয়া প্রাণ, করিয়া অমৃত পান, বিষের যাতনা আর। কিছু না রহিল তার, মহাঘুমে ভরপুর। সব ক্লান্তি হল দ্বয়। তখন বাসুকী তারে স্নেহভরে বারে বারে আশিস করিয়া তায় পাঠাইল হস্তিনায়। সেথা ভাই পরিজনে আছে শোকাকুল মনে, কুম্ভীর নয়নজল ঝরে সেথা অবিরম, মগন গভীর দুখে ফিরে সবে মুনি মুখে। হেন কালে হারনিধি সহসা মিলাল বিধি, বিষাদ হইল দূর জাগিল হস্তিনাপুর, উলসিত কলরবে আনন্দে মাতিল সবে। সন্দেশ-অগ্রহায়ণ-পৌষ, ১৩৩১বিবিধ কবিতা৪২৫