বলল বুড়ো, “কিন্তু বাবা, আসল কথা সহজ এই—
ঢের দেখেছি-পরখ-করে, কোথাও আমার মগজ নেই।
তাইতে আমার হয় না কিছু—মাথায় যে সব ফক্কিফাঁক—
যতই নাচি উল্টো নাচন, যতই না খাই চর্কিপাক।”
বলতে গেলাম—“তাও কি হয়”—আমনি হঠাৎ ঠ্যাং নেড়ে
আবার বুড়ো হুড়্মুড়িয়ে ফেলল আমায় ল্যাং মেরে
ভাবছি সবে মারব ঘুঁষি এবার বুড়োর রগ ঘেঁষে,
বললে,বুড়ো, “করব কি বল? করায় এ-সব অভ্যেসে।
ছিলাম যখন রেল-দারোগা চড়তে হত ট্ৰেইনেতে
চলতে গিয়ে ট্রেনগুলো সব পড়ত প্রায়ই ড্রেইনেতে।
তুবড়ে যেত রেলের গাড়ি, লাগত গুঁতো চাক্কাতে,
ছিটকে যেতাম যখন তখন হঠাৎ এক-এক ধাক্কাতে।
নিত্যি ঘুমোই-একচোখে তাই, নড়লে গাড়ি—আমনি ‘বাপ্’—
এমনি করে ডিগ্বাজিতে এক্কেবারে শূন্যে লাফ!
তাইতে হল নাচের নেশা, হঠাৎ হঠাৎ নাচন পায়,
বসতে শুতে আপনি ভুলে ডিগ্বাজি খাই আচমকায়!
নাচতে গিয়ে দৈবে যদি ঠ্যাং লাগে তোর পাঁজরাতে,
তাই বলে কি চটতে হবে? কিম্বা রাগে গজরাতে?”
আমিও বলি, “ঘাট হয়েছে, তোমার ক্ষুরে দণ্ডবৎ!
লাফাও তুমি যেমন খুশি, আমরা দেখি অন্য পথ।”
পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৫১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সন্দেশ—চৈত্র, ১৩২৭
৪৮
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী : ২