পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ছটা বেরিয়েছে——আর সেই ঝাপসা ধোঁয়ার ভিতর দিয়ে রঙবেরঙের গাছপালা, পাহাড় জঙ্গল দেখা যাচ্ছে, ঠিক যেন ছিটের পর্দা।

 এমনি করে কত আশ্চর্য আবিষ্কার করতে করতে লিভিংস্টোন একেবারে নুতন পথ দিয়ে দুই বছরে আফ্রিকার পূর্বকূলে এসে পড়লেন। তার পর দেশে ফিরে গিয়ে সকলের কাছে সম্মান লাভ করে, তিনি দলবল নিয়ে আবার সেই জাম্বেসি নদীর ধারে ফিরে গেলেন। এবারে তাঁর স্ত্রীও তাঁর সঙ্গে গেলেন- আর ইংরজি গভর্নমেণ্ট তাঁকে টাকা দিয়ে সাহায্য করতে লাগলেন। কিন্তু কিছুদিন পরেই তাঁর স্ত্রী মারা গেলেন, তার পর তার সঙ্গের লোকজন অনেকেই ফিরে গেলেন। ক্রমে বিলাত থেকে খরচ অসাও বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু লিভিংটোন একাই নিজের খরচে ঘুরতে লাগলেন। এবার নুতন পথে তিনি উত্তর-পূর্ব মুখে বড়ো-বড়ো হ্রদের দেশ দিয়ে একেবারে ইজিটের কাছে। ‘নায়াসা’তে এসে পড়লেন। তার সঙ্গে সে-দেশী দু-চারটি লোক ছাড়া আর কেউ ছিল না—কিন্তু তারা তাঁকে এত ভালোবাসত যে, ঘোর বিপদের মধ্যেও তাকে ছেড়ে যেত রাজি হয় নি।

 লিভিংস্টোন কি তাদের কম ভালোবেসেছিলেন। সেই আঁধার দেশের লোকের দুঃখে তার যে কী দুঃখ—তাঁর বইয়ের পাতায় পাতায় তার পরিচয় পাওয়া যায়। পর্তু- গীজদের অত্যাচারের বর্ণনা করতে গিয়ে তাঁর কথাগুলো যেন আগুন হয়ে উঠত। মৃত্যুর পূর্বে তাঁর শেষ লেখা এই—এই নির্জন দেশে বসে আমি এইমাত্র বলতে পারি, পৃথিবীর এই কলঙ্ক (দাস ব্যবসায়) যে মুছে দিতে পারবে—ভগবানের অজস্র আশীর্বাদে সে ধন্য হয়ে যাবে।”

 ১৮৮৬ খৃস্টাব্দে পঞ্চাশ বৎসর বয়সে তিনি শেষবার আফ্রিকায় ঘুরতে গিয়েছিলেন তার পর অরি দেশে ফেরেন নি। এবার তিনি গোড়া হতেই নানারকম বিপদে পড়েছিলেন -তার জন্য যে রসদ পাঠানো হল কতক তার কাছে পেঁৗছলই না—বাকি সব চুরি হয়ে গেল। তার আর কোনো খবরই পাওয়া গেল না। ক্রমে দেশের লোক ব্যস্ত হয়ে উঠল, লিভিংস্টোনের কি হল জানবার জন্য চারিদিকে লেখালেখি চলতে লাগল। শেষটা স্ট্যালি বলে একজন ওয়েলশ যুবক তার খবর আনতে আফ্রিকায় গেলেন। এত বড়ো মহাদেশের মধ্যে একজন লোককে আন্দাজে খুঁজে বার করা যে খুবই বাহাদুরির কাজ, তাতে আর সন্দেহ কি? স্ট্যালি বছরখানেক ঘুরে তাঁর দেখা পেলেন বটে, কিন্তু তখন লিভিংস্টোনের মর-মর অবস্থা। তিনি এত রোগী আর দুর্বল হয়ে পড়েছেন যে, দেখলে চেনা যায় না। স্ট্যালির সাহায্যে লিভিংস্টোন কতকটা সেরে উঠলেন এবং তার সঙ্গে কিছুদিন ঘুরলেন, কিন্তু দেশে ফিরে যেতে রাজি হলেন না। তিনি বললেন, “আমি এই দেশের নির্জন নিস্তদ্ধ জঙ্গলের মধ্যেই এ জীবন শেষ করব।” স্ট্যালি ফিরে গেলেন।

 তার পর, বছরখানেক পরে একদিন লিভিংস্টোন তার বিছানার পাশে হাঁটু গেড়ে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করতে বসলেন, আর উঠলেন না। তাঁর লোকেরা তাঁকে ডাকতে এল, তখন দেখল যে তিনি সেই অবস্থাতেই মারা গেছেন। বিশ্বাসী চাকরো

জীবনী
৫৫