অসাধারণ কষ্ট স্বীকার করে পাহাড় জঙ্গল পার হয়ে, সমুদ্রের কূল পর্যন্ত তাঁর মৃতদেহ বয়ে এনে জাহাজে তুলে দিল। ইংলণ্ডে যাঁরা বীর, যাঁরা দেশের নেতা, যাঁদের কীর্তিতে দেশের গৌরব বাড়ে, তাঁদের কবর দেওয়া হয় ওয়েস্টমিনস্টার এবি’তে। সেই ওয়েস্ট মিনস্টার এবিতে যদি যাও, সেখানে লিভিংস্টোনের সমাধি দেখতে পাবে।
পাস্তুর
মানুষের যতরকম রোগ হয়, আজকালকার ডাক্তারেরা বলেন, তার সবগুলিই অতি ক্ষুদ্র জীবাণুর কীতি। এই জীবাণু বা মাইক্রোব’ (Microbe) গুলিই সকল রোগের পথেঘাটে বাতাসে মানুষের শরীরের ভিতরে বাহিরে ইহারা ঘুরিয়া বেড়ায়। আজকালকার চিকিৎসাশাস্ত্রে ইহাদের খাতির খুব বেশি। এই জীবাণুগুলির ভালোরূপ পরিচয় লওয়া, ইহাদের চালচলনের সংবাদ রাখা এবং এগুলিকে জব্দ করিবার নানাপ্রকার ব্যবস্থা করা, এখনকার ডাক্তারিবিদ্যার খুব একটা বড় ব্যাপার হইয়া পড়িয়াছে এবং তাহার ফলে চিকিৎসাপ্রণালী আশ্চর্যরকম উন্নতি লাভ করিয়াছে। এই-সমস্ত উন্নতি এবং এই নুতন প্রণালীর মুলে ফরাসী পণ্ডিত লুই পাস্তুর। পাস্তুর একা এ বিষয়ে নূতন আবিষ্কার ও নূতন চিন্তা দ্বারা মানুষের জ্ঞান ও চেষ্টাকে যে কতদূর অগ্রসর করিয়াছেন, ভাবিলে অশ্চির্য হইতে হয়।
প্রায় চুরানব্বই বৎসর আগে পাস্তুরের জন্ম হয়। অতি অল্প বয়স হইতেই শিক্ষকদের মুখে তাঁহার বুদ্ধির প্রশংসা শুনা যাইত। সে সময়কার বড়ো-বড়ো বৈজ্ঞানিকদের কাছে তিনি বিজ্ঞানশিক্ষা করিয়াছিলেন এবং সেই সময় হইতেই রসায়নবিদ্যায় তাহার খুব নাম শুনা গিয়াছিল। পঁয়তাল্লিশ বৎসর বয়সে যখন তিনি অধ্যাপক নিযুক্ত হইয়া পারিসে আসেন তখনো লোকে তাঁহাকে খুব বড়ো রাসায়নিক পণ্ডিত বলিয়াই জানি। কিন্তু দেখিতে দেখিতে তাঁহার চোখ পড়িল আর-একটা ব্যাপারের উপরে-‘জিনিস পচে কেন? এই প্রশ্ন লইয়া তিনি ভারি ব্যস্ত হইয়া পড়িলেন। তাঁহার বন্ধুবান্ধবেরা এবং পুরাতন শিক্ষকেরা ইহাতে ভারি দুঃখিত হইলেন। সকলেই বলিতে লাগিলেন, “পারের এমন বুদ্ধি হিল, চেষ্টা করিলে সে রসায়নশাস্ত্রে কত কি করিতে পারিত। সে কিনা একটা বাজে বিষয় লইয়া সময় নষ্ট করিতে বসিল।”
কিন্তু পাস্তুর ছাড়িবার লোক নহেন। তিনি ভাবিলেন ব্যাপারটা তলাইয়া দেখিতে হইবে। আগে লোকের ধারণা ছিল সব জিনিস বাতাস লাগিয়া আপনা-আপনি’ পটিয়া যায়। পাস্তুর দেখাইলেন, দুধে একপ্রকার জীবাণু থাকে যাহার জন্য দুধ উকিয়া নষ্ট হইয়া যায়। মাখন যে পচে তাহাও আর-এক প্রকার জীবাণুর কাণ্ড। ভাত চিনি বা ফলের রস পচাইয়া যে মদ প্রস্তুত হয়, সেখানেও জীবাণু। নানাপ্রকার জীবাণু বাতাসে