উঠিতেছে কেবল পাস্তুরের প্রসাদে। অজি বিশ বৎসর হইল পাস্তুর মারা গিয়াছেন। ফরাসি জাতি রাজসম্মানে তাহার সমাধি দিয়া, সেই সমাধির উপর তাহারই নামে বিতান মন্দির প্রতিষ্ঠা করিয়াছে, সেখানে এখনো নূতন নূতন আবিষ্কার চলিতেছে। পাস্তুরের শিষ্যেরা এখন পৃথিবীর চারিদিক ছাইয়া ফেলিয়াছেন, তাহারই পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়া এখনো কত লোক কত কীর্তি সঞ্চয় করিতেছে।
পাস্তুরকে জিজ্ঞাসা করা হইয়াছিল, “তুমি সারা জীবন ধরিয়া কি দেখিলে এবং কি শিখিলে?” পাস্তুর বলিলেন, “দেখিলাম, এ জগৎব্যাপারের সকলই আশ্চর্য, সকলই অলৌকিক।”
সক্রেটিস
সে প্রায় আড়াইহাজার বছর আগেকার কথা—গ্রীস দেশে এথেন্স নগরের একটি গরিবের ঘরে একটি কুশ্রী ছেলের জন্ম হয়। গরিবের ছেলে, পরনে তার ছেড়া কাপড়, দুই বেলা পেট ভরিয়া খাইতে পায় কিনা সন্দেহ—সে আবার লেখাপড়া শিখিবে কিরূপে? সে পাথরের মূতি গড়িতে পরিত—তাই বেচিয়া এবং অবসরমতো লোকের কাছে দু কথা শিখিয়া মানুষ হইতে লাগিল। এমন সময় ক্লাইটো নামে একটি ধনী লোক এই ছেলেটির সঙ্গে আলাপ করিয়া তাহার মিষ্ট ব্যবহারে এত খুশি হইলেন যে, তিনি তখনই নিজের খরচে তাহার পড়াশুনার ভালো ব্যবস্থা করিয়া দিলেন। সকলেই ভাবিল, গরিবের ছেলে লেখাপড়া শিখিয়া, এইবার একটা ভালো চাকুরি বা ব্যবসা করিবে।
এথেন্স নগরে তখন একদল লোক থাকিত, তাহাদের ব্যবসা ছিল পণ্ডিতি করা। তাহারা লোকের কাছে পয়সা লইয়া আড্ডা খুলিত এবং সেইখানে বড়ো-বড়ো কথা আওড়াইয়া চুলচেরা তর্ক করিয়া, নানারকম বিদ্যার ভড়ং দেখাইত। তাহাদের বোলচালে ভুলিয়া লোকে মনে করিত, না জানি তাহারা কত বড়ো পণ্ডিত। একটু বয়স হইলেই সেই গরিবের ছেলে এই পণ্ডিত মহলের পরিচয় সইতে আসিলেন। মুখে মিষ্টি মিষ্টি কথা, নিতান্ত ভালোমানুষটির মতো আস্তে আস্তে প্রশ্ন করেন, যেন তিনি কিছুই জানেন না—কিন্তু তাহার প্রশ্নের ঠেলায় পণ্ডিতের দল অস্থির হইয়া পড়িলেন। তাঁহার সঙ্গে তর্ক করিতে গিয়া এক-একজন পণ্ডিত এমন নাকাল হইয়া আসিলেন যে, দেখিতে দেখিতে তাহার নাম চারিদিকে ছড়াইয়া পড়িল। খালি পা, মোটা কাপড় পরা, খাঁদা বেঁটে গরিব লোকটিকে রাস্তায় ঘাটে সকলেই চিনিয়া ফেলিল। তিনি পথে বাহির হইলে সকলে দেখাইয়া দিত ‘ঐ সক্রেটিস।
দেখিতে দেখিতে এই-সব মূর্খ পণ্ডিতদের উপর সক্রেটিসের ঘোর অশ্রদ্ধা জন্মিয়া গেল। তিক্সি ভাবিতে লাগিলেন, হায়, হায়, এই-সব অপদার্থের হাতে পড়িয়া, এথেন্সের ছেলেগুলি