নাইগার নদীর আশেপাশে যে-সব নিগ্রোরা থাকে তাদের মাণ্ডিঙ্গো’ বলে। তাদের সম্বন্ধে পার্ক অনেক খবর সংগ্রহ করেছেন। তারা মনে করে, এই পৃথিবীটা একটা প্রকাণ্ড সমতল মাঠের মতো। তার শেষ কোথায় কেউ জানতে পারে না, কারণ তার চারিদিক মেঘে ঘেরা। তারা বছরের হিসাব দেয় বড়ো-বড়ো ঘটনার নাম করে, যেমন কুরবানা যুদ্ধের বছর’, ‘দামেসের বীরত্বের বছর। পার্ক যে-সকল গ্রামে গিয়েছিলেন, তার কোনো কোনোটিতে সেই বছরকে বলা হত “সাদা লোক আসবার বছর।
এর পরেও পার্ক আর-একবার দলবল নিয়ে আফ্রিকায় যান এবং সেইখানেই প্রাণ হারান। এবার গোড়াতেই জ্বর-জারি হয়ে তাঁর লোকজন সব মারা যেতে লাগল। সাতচল্লিশজন সাহেবের মধ্যে তিন মাসে কুড়িজন মারা গেল, বাকি অনেকগুলি অসুখে একেবারে কাহিল হয়ে পড়ল। চার মাসে তিনি আবার নাইগার নদীর ধারে উপস্থিত হলেন। তখন তিনি আর সঙ্গে দুই-একটি নিগ্রেী ছাড়া আর সকলেই প্রায় অকর্মণ্য হয়ে পড়েছে। তার পর তিনি নৌকায় চড়ে জলের পথে কয়েকদিন গেলেন, কিন্তু চারিদিক থেকে মূরেরা ক্রমাগত আক্রমণ করে তাদের ব্যতিব্যস্ত করে তুলল। শেষটা যখন তার সঙ্গের সাতটিমাত্র সাহেব বেঁচে আছে, এমন সময় অনেক কষ্টে নিগ্রোদের দেশে এসে তিনি মনে করলেন, এতক্ষণে নিরাপদ হওয়া গেল। কিন্তু এইখানেই নদী পার হবার সময় তিনি দলবলসুদ্ধ নিগ্রোদের হাতে মারা গেলেন। তার একটিমাত্র বিশ্বস্ত নিগ্রো চাকর, তাঁর চিঠিপত্র নিয়ে ফিরে এসে এই খবর দিল যে, নদীর স্রোতের মধ্যে নৌকাকে বেকায়দায় পেয়ে নিগ্রোরা তাদের মেরেকেটে সব লুটে নিয়েছে। তখন পার্কের বয়স চৌত্রিশ বৎসর মাত্র।
গ্যালিলিও
সে সাড়ে তিনশত বৎসর আগেকার কথা। ইটালি দেশে পিসা নগরে সভ্রান্ত বংশে গ্যালিলিওর জন্ম হয়। গ্যালিলিওর পিতা অঙ্কশাস্ত্রে পণ্ডিত ছিলেন, শিল্প সংগীত প্রভৃতি নানা বিদ্যায় তাহার দখল ছিল। কিন্তু তবু সংসারে তাহার টাকা পয়সার অভাব লাগিয়াই ছিল। সুতরাং তিনি ভাবিলেন, পুত্রকে এমন কোনো বিদ্যা শিখাইবেন, যাহাতে ঘরে দুপয়সা আসিতে পারে। স্থির হইল, গ্যালিলিও চিকিৎসা শিখিবেন।
কিন্তু বাল্যকাল হইতেই গ্যালিলিওর মনের ঝোঁক অন্যদিকে। ডাক্তারি বই পড়ার চাইতে তিনি কলকজা লইয়া নাড়াচাড়া করিতেই বেশি ভালোবাসিতেন। সকলে বলিত, ‘ও-সব শিখি লাভ কি? যাহাতে পয়সা হয় তাই শিখিতে চেষ্টা কর। উনিশ বৎসর বয়সে একদিন ঘটনাক্রমে জ্যামিতি বিষয়ে এক বক্তৃতা শুনিয়া, গ্যালিলিও সেইদিন হইতেই জ্যামিতি শিখিতে গিয়া গেলেন। কিন্তু বেশিদিন তাহার কলেজে পড়া হইল না।