পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মনে কি দয়া হইল, তিনি তাঁহাকে ছাড়িয়া দিলেন। কিন্তু কলম্বস এ অপমানের কথা জীবনের শেষদিন পর্যন্ত ভুলিতে পারেন নাই। মানুষের অকৃতজ্ঞতার কথা ভাবিতে ভাবিতে দরিদ্র ও অনাদরের মধ্যেই এই কীর্তিমান পুরুষের জীবন শেষ হইল।

সন্দেশ—আশ্বিন, ১৩২৪


‘সামান্য' ঘটনা

 এক-একটা সামান্য ঘটনা থেকে জগতে কত বড়ো-বড়ো কাণ্ড, কত আবিষ্কার, কত, মারামারি, কত যুদ্ধবিগ্রহের আরম্ভ হয়েছে, সে কথা ভাবতে গেলে এক-এক সময় ভারি আশ্চর্য লাগে। আমাদের দেশে পুরাণে এরকম ঘটনার অনেক গল্প আছে। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর কৌরবদের মধ্যে যখন কেবল অশ্বত্থামা, কৃতবর্মা আর কৃপাচার্য, এই তিনজনমাত্র বাকি রইলেন, তখন অন্ধকার রাতে গাছের তলায় শুয়ে অশ্বত্থামা দেখলেন, একটা পেঁচা এসে কতগুলা ঘুমন্ত কাককে অনায়াসে মেরে রেখে গেল। তাতেই অশ্বত্থামার মনে হঠাৎ এই ফন্দি জাগল যে, আমিও তো এমনি করে অন্ধকার রাত্রে পাণ্ডবশিবিরে ঢুকে যোদ্ধাদের মেরে ছারখার করে আসতে পারি। যেমন মনে হওয়া, অমনি সেইমতো কাজে লাগা। সেই রাত্রের ভয়ংকর ব্যাপারের কথা তোমরা মহাভারতে পড়েছ।

 ছেলেবেলায় ইংরাজিতে রবার্ট ব্রুসের গল্প পড়েছিলাম। স্কটল্যাণ্ডের যোদ্ধা রাজা রবার্ট ব্রুস প্রবল শত্রুর কাছে বার বার পরাজিত হয়ে শেষটায় রাজ্যের আশা ছেড়ে দিয়ে এক পাহাড়ের গুহায় লুকিয়ে আছেন। এমন সময় তিনি দেখলেন একটা মাকড়সা একখানি সুতো ধরে বার বার গুহার মুখটাকে বেয়ে উঠবার চেষ্টা করছে আর বার বার পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু তবু সে চেষ্টা ছাড়ছে না। অনেক চেষ্টার পর শেষে সে ঠিকমতো উঠতে পারত। তা দেখে রাজা রবাঠের মনেও ভরসা এল—তিনি ভাবলেন, আর-একবার চেষ্টা করে দেখি। সেই চেষ্টার ফলে তিনি জয়লাভ করে আবার তাঁর রাজ্য ফিরে পেলেন।

 বিতানবীর নিউটন তার বাগানে বসে দেখলেন, গাছ থেকে একটা ফল মাটিতে পড়া। ঘটনাটা নিতান্তই সামান্য, কিন্তু বিজ্ঞানের ইতিহাসে তার ফলাফল বড়ো সামান্য নয়। নিউটন ভাবতে বসলেন, “ফলটা মাটিতে পড়ল কেন? জিনিসমাই শূন্যে ছেড়ে দিলে মাটিতে পড়ে কেন? চারিদিক জুড়ে এত প্রকাণ্ড আকাশ পড়ে আছে, তা ছেড়ে এই পৃথিবীর মাটির উপরেই তার এত ঝোঁক কেন?” ভাবতে ভাবতে তিনি মাধ্যাকর্ষণের তত্ব আবিষ্কার করে ফেললেন। প্রথম, তিনি সিদ্ধান্ত করলেন যে, পৃথিবীটা তার আশেপাশের সমস্ত টানে। কিন্তু শুধু পৃথিবীই কি টানে? চন্দ্র

৭৮
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী: ২