পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তিনি অদ্ভুত স্বপ্ন দেখলেন—এক অসভ্য রাজা তাঁকে বন্দী করে হুকুম দিয়েছে, এখনই আমাকে সেলাইয়ের কল বানিয়ে দাও, যদি না দাও তো তোমায় মেরে ফেলব। স্বপ্নের মধ্যে সেলাইয়ের কল বানানো গেল না। রাজা হকুম দিলেন ‘মার একে'। তখন কতগুলো তোক বল্লম দিয়ে তাঁকে মারতে এল, সেই বল্লমের মুখের ফলকের মাথাটা ফুটো। তৎক্ষণাৎ হাউসের ঘুম ভেঙে গেল, তিনি উঠে বসতেই সর্বপ্রথমে তার মনে হল ‘বল্লমের মুখের কাছে ফুটো’! তিনি ভাবলেন, 'এই তো ঠিক হয়েছে। কলের দুচের পিছনে সুতো না দিয়ে, এরকম মুখের কাছে সুতো দিলেই তো অনেকটা সহজ হয়ে আসে। শেষকালে পরীক্ষায় তাই দেখা গেল—সেলাইয়ের কল করবার পক্ষে আর কোনো বাধাই রইল না। এই হল সেলাইয়ের কলের ইতিহাস।

 এখানে সামান্য ঘটনাটি একটা স্বপ্ন মাত্র। এর পরে যখন সেলাইয়ের কল দেখবে, তখন এই কথাটি ভেবে দেখো যে, আদি জন্মের ইতিহাসের মূল হচ্ছে একটি স্বপ্ন।

সন্দেশ-কার্তিক, ১৪২৪


ডারুইন

 ছেলেবেলায় আমরা শুনিয়াছিলাম ‘মানুষের পূর্বপুরুষ বানর ছিল। ইহাও শুনিয়া- ছিলাম যে, ডারুইন নামে কে এক পণ্ডিত নাকি এ কথা বলিয়াছেন। বাস্তবিক ডারুইন এমন কথা কোনোদিন বলেন নাই। আসল কথা এই যে, অতি প্রাচীনকালে বানর ও মানুষের পূর্বপুরুষ একই ছিল। সেই এক পূর্বপুরুষ হইতেই বানর ও মানুষ, এ-দুই আসিয়াছে—কিন্তু সে যে কত দিনের কথা তাহা কেহ জানে না।

 তখন হইতেই আমার মনে একটা সন্দেহ ছিল, পণ্ডিতেরা এত খবর জানেন কি করিয়া? তাহারা তো সেই প্রাচীনকালের পৃথিবীটাকে চক্ষে দেখিয়া আসেন নাই, তবে তাহার সম্বন্ধে এত সব কথা তাহারা বলেন কিসের জোরে? যাহা হউক, আমরা তো আর পণ্ডিত নই, তাই অনেক কথাই আমাদের মানিয়া লইতে হয়। মানিতে হয় যে এই পৃথিবীটা ফুটবলের মতো গোল এবং সে লাট্টর মতো ঘোরে, আর সূর্যের চারিদিকে পাক দিয়া বেড়ায়—যদিও এ-সবের কিছুই আমরা চোখে দেখি না। হেনে- বেলায় ভাবিতাম, পণ্ডিতদের খুব বুদ্ধি বেশি তাই তাঁহারা অনেক কথা জানিতে পারেন। কিন্তু এখন দেখিতেছি কেবল তাহা নয়। বুদ্ধি তো চাইই, তা ছাড়া আরো কয়েকটি জিনিস চাই যাহা না থাকিলে কেহ কোনোদিন যথার্থ পণ্ডিত হইতে পারে না। তার মধ্যে একটি জিনিস, ঠিকমতো দেখিবার শক্তি। সাধারণ মোকে যেমন দু-একবার চোখ বুলাইয়া মনে করে ইহার নাম দেখা-পণ্ডিতের দেখা সেরকম নয়। তাঁহারা একই বিষয় লইয়া দিনের পর দিন দেখিতেছেন, তবু দেখার আর শেষ হয় মাখার উপর এত যে তারা সারারাত মিটমিট করিয়া জ্বলে, আবার দিনের

৭৬
সুকুমার সময় রচনাবলী : ২