সেইগুলা পয়সা দিয়া কিনিয়া লইত। সেগুলা যে প্রাচীন মানুষের চিহ্ন মজুরেরা তাহা জানিত না। তাহারা পয়সার লোভে সেই-সব সংগ্রহ করিয়া রাখিত, কিন্তু সাহেব পিছন ফিরিলেই তাহারা হাসাহাসি করিত, আর ইঙ্গিত করিয়া বলিত, 'লোকটার মাথায় কিছু গোল আছে।' একদিন হঠাৎ খুলির হাড়ের মতো এক টুকরা জিনিস পাইয়া সেই সাহেবের উৎসাহ ভয়ানক চড়িয়া গেল—এবং কিছুদিন বাদে কোথা হইতে এক বুড়া আসিয়া সেই সাহেবের সঙ্গে মিলিয়া মাটি খুঁটিতে আরম্ভ করিলেন। একটার জায়গায় দুইটা পাগলকে দেখিয়া মজুরদেরও আমোদ বাড়িয়া গেল, কারণ ইহাদের উৎসাহের কারণ তাহারা কিছুই বুঝিতে পারে নাই। দুজনের চেষ্টায় যাহার আবিষ্কার হইল বৈজ্ঞানিকেরা তাহার নাম দিয়াছেন পিট ডাউনের খুলি। ইহা অতি প্রাচীনকালের একটা মানুষের মাথার টুকরা। কেহ কেহ বলেন এত প্রাচীন মানুষের চিহ্ন আর পাওয়া যায় নাই। খুলিটার বয়স লইয়া পণ্ডিতমহলে অনেক তর্ক-বিতর্ক হইয়াছে। ইহার জন্য সাহেব দুটি ছয় মাস ধরিয়া মাটিতে বসিয়া 'রাবিশ’ ঘাঁটিয়াছিলেন।
বনচাঁড়ালের গাছের পাতা আপনা-আপনি কাঁপিতে থাকে। ইহা অনেক লোকেই দেখিয়াছে কিন্তু আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর কৌতূহল ইহাতেই জাগিয়া উঠিল। তিনি যে কতরকম কৌশল খাটাইয়া কতরকম পরীক্ষা করিয়া এই পাতাকে নাচাইয়া দেখিয়াছেন, তাহার যদি খবর লও, তবে বুঝিবে বৈজ্ঞানিকের দেখা আর সাধারণ লোকের দেখায় তফাত্ কিরকম!
নোবেলের দান
পাঁচ বৎসর আগে যখন ইউরোপ হইতে সংবাদ আসিল যে, বাংলার কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 'নোবেল প্রাইজ' পাইয়াছেন, তখন দেশময় একটা উৎসাহের ঢেউ ছুটিয়াছিল। ‘নোবেল প্রাইজ' জিনিসটা কি তাহা অনেকেই জানি না, তাহারা সে বিষয়ে আগ্রহ করিয়া খোঁজ করিতে লাগিল।
আলফ্রেড বের্নহার্ড নোবেল সুইডেন দেশের একজন রাসায়নিক ছিলেন। তিনি মৃত্যুকালে প্রায় সওয়া তিনকোটি টাকার সম্পত্তি দান করিয়া যান। যাঁহার বিজ্ঞান- জগতে নূতন তত্ত্ব আবিষ্কার করেন, যাঁহারা সাহিত্যের উন্নতি করেন এবং বিশেষভাবে যাঁহারা জগতে শান্তি স্থাপনের সহায়তা করেন, প্রতি বৎসর তাঁহাদের সম্মানের জন্য এই সম্পত্তির অয় হইতে নোবেল প্রাইজ নামে লক্ষাধিক টাকার অর্ঘ্য দেওয়া হয়। যে-কোনো দেশের যে-কোনো লোক এই অর্ঘ্যলাভের যোগ্য হইলেই তাহা পাইতে পারেন।
এই নোবেল লোকটির জীবনের কাহিনী বড় অদ্ভুত। দুর্বল স্বাস্থ্য লইয়া রুগ্ণ ভগ্ন দেহে তিনি সারাজীবন কাটাইয়াছিলেন। একদিকে তিনি অত্যন্ত ভীরু ও নিরীহ