দুষ্টু দরজি
এক দরজি ছিল, তার মতো ভালো সেলাই আর কেউ জানত না। একদিন তাদের রাজপুত্রের বড় সখের পোশাক ছিঁড়ে গেল, তাই তিনি সেটা দরজির বাড়ি রিফু করতে পাঠিয়ে দিলেন।
দরজি বসে বসে পোশাক সেলাই করছে আর ভাবছে—‘আহা, এমন একটি পোশাক যদি আমি পরতে পেতাম, তবে না জানি আমাকে কেমন দেখাত!’ ভাবতে ভাবতে তার ভারি লোভ হল—আস্তে আস্তে পোশাকটা তুলে গায়ে দিল। তারপরে আয়নাটি সামনে ধরে বলল—“বাঃ, এ যে ঠিক রাজপুত্রের মতো দেখাচ্ছে! এখন আমাকে দেখে কে দরজির ছেলে বলে বুঝবে?” এই না বলে, বাক্স থেকে তার পুঁজিপাটা বের করে নিয়ে রাতারাতি চুপচাপ সে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেল।
সে যেখানে যায় তার সুন্দর চেহারা আর দামি পোশাক দেখে লোকে মনে করে যে নিশ্চয়ই কোনো রাজা-রাজড়ার ছেলে হবে।
চলতে চলতে একদিন তারই বয়সী একটি লোকের সঙ্গে তার আলাপ হল। সে লোকটি বলল, “আমি সুলতানের ছেলে, আমার নাম ওমার। আমার জন্মের সময় গণক বলেছিল যে বিশ বৎসর বয়স পর্যন্ত নিজের রাজ্যে থাকলে আমার ভয়ানক বিপদ হবে। সেইজন্য বাবা আমাকে মামাবাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। সেখানেই আমি মানুষ হয়েছি। এখন বিশ বছর হয়ে গিয়েছে তাই দেশে ফিরে যাচ্ছি।” দরজি জিজ্ঞাসা করলো, ‘‘আচ্ছা, তুমি তো বড় হয়ে সেখানে কখনো যাও নি; কি করে সব চিনবে?” ওমার বলল, “এই রাস্তা ধরে কিছুদূরে গেলে একটা মসজিদ দেখা যাবে, সেখানে বাবা আমার জন্য অপেক্ষা করবেন। এই যে তলোয়ার দেখছ, এটা মামা দিয়েছেন, তাঁর সঙ্গে বাবার এই কথা আছে যে এই তলোয়ার দেখিয়ে আমি বলব ‘যার আশায় বসে আছেন, আমিই সেই’ আর বাবা উত্তর করবেন, ‘আল্লা তোমার মঙ্গল করুন’—তা হলেই চেনা যাবে।” এইরকম গল্প করতে করতে দুজনে একটা সরাইখানায় ঢকলো। সেখানে খেয়ে দেয়ে দুজনে শুয়ে রইল। দরজিটার কিন্তু সারারাত হল হল না—সে ভোর না হতেই উঠে ওমারের তলোয়ারটি নিয়ে চুপচাপ সেখান থেকে পালাল।
খানিকদূর গিয়ে দরজি দেখতে পেল যে একটা মস্ত মসজিদের সামনে অনেক লোকজন দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মাঝখানে একজন বুড়ো লোক বসে আছেন, তাঁর চেহারা আর পোশাক দেখেই সে বুঝলো, ইনিই নিশ্চয় সলতান। সে সোজা গিয়ে তাঁর পায়ের কাছে তলোয়ারটি রেখে সেলাম করে বলল, “যার আশায় বসে আছেন আমিই সেই”—অমনি সুলতান তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “আল্লা তোমার মঙ্গল করন।” সঙ্গের লোকেরা তখন আনন্দে কোলাহল করতে করতে বাড়ি যাবার আয়োজন করতে লাগল।
এমন সময় ওমার হাঁপাতে হাঁপাতে সেইখানে এসে হাজির। সে চিৎকার করে বলল, “ওর কথা শুনো না—ও একটা জোচ্চোর—আমিই আসল সুলতানের ছেলে।” দরজি তাড়াতাড়ি বলে উঠল, “আরে, ওটা একটা দরজির ছেলে—পাগল কিনা তাই