পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/১১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 রাজদণ্ড, আর দরজির কৌটোয় একটা ছুঁচ আর সুতো!

 তখন আর কারো বুঝতে বাকি রইল না যে কে দরজির ছেলে আর কে সত্যি সুলতানের ছেলে। চারদিকে হৈ চৈ পড়ে গেল। সেই গোলমালের মধ্যে দরজির ছেলে এক দৌড়ে যে কোথায় পালাল, আর কেউ তাকে খুঁজে পেলো না।

সন্দেশ—১৩২৩


আশ্চর্য ছবি

 জাপান দেশে সেকালের এক চাষা ছিল, তার নাম কিকিৎসুম। ভারি গরিব চাষা, আর যেমন গরিব তেমনি মূর্খ। দুনিয়ার সে কোনো খবরই জানত না; জানত কেবল চাষবাসের কথা, গ্রামের লোকদের কথা, আর গ্রামের যে বুড়ো ‘বজ্ঞে’ (পুরোহিত), তার ভালো ভালো উপদেশের কথা। চাষার যে স্ত্রী, তার নাম লিলিৎসি। লিলিৎসি চমৎকার ঘরকন্না করে, বাড়ির ভিতর সব তকতকে ঝরঝরে করে গুছিয়ে রাখে, আর রান্না করে এমন সুন্দর যে চাষার মুখে তার প্রশংসা আর ধরে না। কিকিৎসুম কেবলই বলে, “এত আমার বয়স হল, এত আমি দেখলাম শুনলাম, কিন্তু রূপে গুণে এরৎ মতো আর-একটিও কোথাও দেখতে পাইনি।” লিলিৎসি সে কথা যত শোনে ততই খুশি হয়।

 একদিন হয়েছে কি, কোথাকার এক শহুরে বড় মানুষ এসেছেন সেই গ্রাম দেখতে; তাঁর সঙ্গে ছিল তাঁর ছোট্ট মেয়েটি, আর মেয়েটির ছিল একটি ছোট্ট আয়না। রাস্তায় চলতে চলতে আয়নাটা সেই মেয়ের হাত থেকে কখন পড়ে গেছে, কেউ তা দেখতে পায়নি। কিকিৎসুম যখন চাষ করে বাড়ি ফিরছে তখন সে দেখতে পেল, রাস্তার ধারে ঘাসের মধ্যে কি একটা চকচক করছে। সে তুলে দেখল, একটা অদ্ভুত চ্যাপ্টা চৌকোনা জিনিস! সে কিনা কখনো আয়না দেখেনি, তাই সে ভয়ানক আশ্চর্য হয়ে ভাবতে লাগল, এটা আবার কিরে? নেড়েচেড়ে দেখতে গিয়ে হঠাৎ সেই আরসির ভিতরে নিজের ছায়ার দিকে তার নজর পড়ল। সে দেখল কে একজন অচেনা লোক তার দিকে গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে আছে। দেখে সে এমন চমকে উঠল, যে আর-একটু হলেই আয়নাটা তার হাত থেকে পড়ে যাচ্ছিল। তারপর অনেক ভেবে চিন্তে সে ঠিক করল, এটা নিশ্চয়ই আমার বাবার ছবি—দেবতারা আমার উপর খুশি হয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন। তার বাবা মারা গিয়েছেন সে অনেক দিনকার কথা, কিন্তু তবু তার মনে হল, হ্যাঁ এইরকমই তো তাঁর চেহারা ছিল। তারপর—কি আশ্চর্য! সে চেয়ে দেখল তার নিজের গলায় যেমন একটা রূপার মাদুলি, ছবির গলায়ও ঠিক তেমনি! এ মাদুলি তো তার বাবারই ছিল, তিনি তো সর্বদাই এটা গলায় দিতেন—তবে তো এটা তার বাবারই ছবি।

 তখন কিকিৎসুম করল কি, আয়নাটাকে যত্ন করে কাগজ দিয়ে মুড়ে বাড়ি নিয়ে

১০৬
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী