আমার ছবিকে নিয়ে তাচ্ছিল্য করছ—জান ওটা আমার বাবার ছবি?” লিলিৎসি আরো রেগে বলল, “হ্যাঁ, তোমার বাবার ছবি! আমি কচি খুকি কিনা, একটা বলে দিলেই হল! তোমার বাবার কি অমনি আহ্লাদী মেয়ের মতো চেহারা ছিল? তিনি কি আমাদের মতো ক'রে খোঁপা বাঁধতেন?” কথাটা শেষ না হতেই কিকিৎসুম বলল, “তুমি না দেখেই রাগ করছ কেন? একবার ভাল করে দেখই না।” এই বলে কিকিৎসুম নিজে আবার দেখল, আরসির মধ্যে সেই মুখ।
তখন দুজনের মধ্যে ভয়ানক ঝগড়া বেধে গেল। কিকিৎসুম বলে ওটা তার বাবার ছবি, লিলিৎসি বলে ওটা একটা হিংসুটি মেয়ের ছবি। এইরকম তর্ক চলছে, এমন সময়ে গ্রামের যে বুড়ো ‘বজ্ঞে’, সে তাদের গলার আওয়াজ শুনে দেখতে এল ব্যাপারখানা কি! পুরুতঠাকুরকে দেখে দুজনেই নমস্কার করে তার কাছে নালিশ লাগিয়ে দিল। কিকিৎসুম বলল, “দেখুন, আমার বাবার ছবি, সেদিন আমি রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পেলাম, আর ও কিনা বলে যে ওটা কোন্-এক মেয়ের ছবি।” লিলিৎসি বলল, “দেখলেন কি অন্যায়! এনেছেন একটা গোমড়ামুখি মেয়ের ছবি, আর আমায় বোঝাচ্ছেন, ঐ নাকি তাঁর বাবা!”
তখন ‘বজ্ঞে’ ঠাকুর বললেন, “দাও তো দেখি ছবিখানা।” তিনি আরসি নিয়ে মিনিট পাঁচেক খুব গম্ভীরভাবে তাকিয়ে রইলেন। তারপর আয়নাটাকে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করে বললেন, “তোমরা ভুল বুঝেছ। এ হচ্ছে অতি প্রাচীন এক মহাপুরুষের ছবি। আমি দেখতে পাচ্ছি, ইনি একজন যে-সে লোক নন। দেখছ না, মুখে কি গম্ভীর তেজ, কিরকম বুদ্ধি আর পাণ্ডিত্য, আর কি সুন্দর প্রশান্ত অমায়িক ভাব। এ ছবিটা তো এমন করে রাখলে চলবে না; বড় মন্দির গড়ে তার মধ্যে পাথরের বেদি বানিয়ে, তার মধ্যে ছবিখানাকে রাখতে হবে—আর ফুলচন্দন ধূপধুনো দিয়ে তার সম্মান করতে হবে।”
এই বলে ‘বজ্ঞে’ ঠাকুর আরসি নিয়ে চলে গেলেন। আর কিকিৎসুম আর লিলিৎসি ঝগড়া-টগড়া ভুলে খুশি হয়ে খেতে বসল।
ভাঙা তারা
মাতারকি আকাশের পরী। আকাশের পরী যারা, তাদের একটি করে তারা থাকে। মাতারকি তার তারাটিকে রোজ সকালে শিশির দিয়ে ধুয়ে মেজে এমনি চকচক করে সাজিয়ে রাখত যে, রাত্রিবেলা সবার আগে তার ওপরেই লোকের চোখ পড়ত—আর সবাই বলত—“কি সুন্দর!” তাই শুনে শুনে আর-সব আকাশ-পরীদের ভারি হিংসা হত।
তানে হচ্ছেন গাছের দেবতা। তিনি গাছে গাছে রস জোগাতেন, ডালে ডালে