তা হলে কিন্তু উপোস করে মরতে হবে।” লোলি খুব খানিক ঘাড় নেড়ে গম্ভীর হয়ে বলল, “হ্যাঁ, আমি খুব করে পাহারা দেব—আর কখনো ফটক খুলে রাখব না।”
লোলির বাবা চললেন শহরের দিকে, আর লোলি একটা খড়ের গাদার উপর বসে পাহারা দিতে লাগল। বড়ো শুওরটা শুয়ে শুয়ে ঘঁৎ ঘঁৎ করে নাক ডাকছে, তাই শুনতে শুনতে লোলিও কখন যে চোখ বুজে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে, তা সে নিজেও টের পায় নি। হঠাৎ সে কেমন যেন চম্কে উঠল, বাবার কথাগুলো তার মনে পড়ল। সর্বনাশ! শুওর যদি পালায়, তবে এবার দুজনকেই উপোস থাকতে হবে। সে কান পেতে শনল, শুওরের ঘঁৎ ঘঁৎ শব্দ শোনা যাচ্ছে না! সে রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখল—ফটকের দরজা খোলা! ভয়ে অমন শীতের মধ্যেও লোলির গা বেয়ে দরদর করে ঘাম ছুটতে লাগল।
লোলি ভাবল, হয়তো শুওরটা ঘরের মধ্যে গিয়ে ঢুকেছে, কিন্তু সমস্ত ঘরদোর খুঁজে কোথাও সেটাকে পাওয়া গেল না, তখন লোলি পাগলের মতো রাস্তার দিকে ছুটে চলল। কিন্তু রাস্তায় গিয়ে দেখল, শুওর-টুওর কোথাও কিছু নেই—খালি একটা বুড়ো ভিখারি লাঠিতে ভর দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। তখন লোলি আবার বাড়ির মধ্যে দৌড়ে গেল। সে বিছানার তলায় ঢুকে দেখল, মাচার ওপরে চড়ে দেখল, প্রকাণ্ড জালাটার ভেতরে হাত দিয়ে দেখল, সমস্ত টেবিল চেয়ার ঝেড়েঝড়ে দেখল, মই দিয়ে বাড়ির চালায় উঠে দেখল—শুওর কোথাও নেই! লোলি কাঁদ কাঁদ হয়ে আবার রাস্তার দিকে ছুটল।
রাস্তায় গিয়ে সে এদিকে-ওদিকে, মাঠের দিকে, গাছের দিকে, নর্দমার দিকে, সব দিকে তাকিয়ে দেখল, শুওর কোথাও নেই। তখন লোলি সত্যিসত্যিই ভ্যা ঁকরে কেঁদে ফেলল। সে কেঁদে উঠতেই তার মনে হল, কোথায় যেন শুওরটা “ঘঁ—চ” করে চেঁচিয়ে উঠল। লোলি তখন কি করবে বুঝতে না পেরে, সেই বুড়োর পিছন পিছন ছটতে লাগল আর কাঁদতে লাগল, “মশাই গো! মশাই গো! আমাদের শুওরটা কোথায় গেল বলে দিন না মশাই!”
লোলির কান্না দেখে বুড়োর হাসি পেয়ে গেল। সে বলল, “কি, বলছ কি? কার শুওর? কি হয়েছে?” লোলি বলল, “আমাদের সেই শুওরটা—আমি শুওর পাহারা দিতে দিতে একটুখানি ঘুমিয়ে পড়েছি, আর—” বুড়ো অমনি ভেংচে উঠল, “একটুখানি ঘুমিয়ে পড়েছ—আর শুওর অমনি পালিয়েছে। খুব পাহারাদার যা হোক!” লোলি ভেউ ভেউ করে কাঁদতে লাগল, “দোহাই মশায়, আমার শুওর কোথায় গেল বলে দিন।” বুড়ো তখন রেগে বলল, “ভারি তো একটা শুওর, তাই নিয়ে আবার এত ঘ্যানঘ্যান্—এ কিন্তু বাপু নেহাৎ বাড়াবাড়ি!” লোলি বলল, “শুওর গেলে আমাদের উপায় হবে কি? আমরা শীতকালে খাবার পয়সা পাব কোথায়?” বুড়ো দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বলল, “যখন পড়ে পড়ে ঘুমচ্ছিলে, তখন সে কথার খেয়াল ছিল না?” এই বলে বুড়ো আবার কুঁজো হয়ে লাঠিতে ভর দিয়ে চলতে লাগল।
লোলি এবার তার পা জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কান্না শুরু করল, “মশাই গো, দোহাই আপনার!—ও মশাই গো! আমাদের কি হবে গো!” বুড়ো বলল, “কি আপদ! এমন বিচ্ছিরি প্যান্পেনে ছিঁচকাঁদুনে ছেলেও তো দেখি নি কোথায়! চুপ কর শিগ্গির। এখনি পাড়ার লোক সব ছুটে আসবে, ডাকাত পড়েছে মনে করে!” কিন্তু লোলি কি সে কথা শোনে? সে প্রাণপণে কেবলই চেঁচাচ্ছে, “ওরে আমার