কেন, তাঁর কাছে পার পাবার জো নেই। সেগুলি হাতে পড়লেই তিনি অম্নি একটা শুঁকেই নাক সিঁট্কিয়ে বলে ওঠেন, “অতি বিচ্ছিরি! অতি বিচ্ছিরি! তলোয়ার তো নয়, যেন কাস্তে গড়েছে!”
এমনি ক’রে কত ভালো-ভালো কারিকর, কত চমৎকার চমৎকার তলোয়ার বানিয়ে আনে, কিন্তু বিচারের গণে তার দু’ টাকাও দাম হয় না। এর মধ্যে একজন ওস্তাদ কারিকর আছে, সে বেচারা মন প্রাণ দিয়ে এক-একখানি তলোয়ার গড়ে, আর বিচারক মশাই “দূর! দূর!” করে সব বাতিল করে দেন। এইরকম হতে হতে শেষটা কারিকর গেল খেপে।
একদিন সে করল কি, একখানি তলোয়ার বানিয়ে, তার গায়ে বেশ করে লঙ্কার গুঁড়ো মাখিয়ে অসিলক্ষণ পণ্ডিতের কাছে এনে হাজির করল। পণ্ডিত নিতান্ত তাচ্ছিল্য করে, “আবার কি গড়ে আনলি? দেখি?” বলে, যেমনি তাতে নাক ঠেকিয়ে শুঁকতে গেছেন, অমনি লঙ্কার গুঁড়ো নাকে ঢুকতেই হ্যাঁ-চ্–চো করে এক বিকট হাঁচি, আর সেই সঙ্গে তলোয়ারের আগায় ঘ্যাঁচ করে নাক কেটে দুখান!
চারিদিকে হৈ চৈ পড়ে গেল, “জল আনরে,” “কবিরাজ ডাকরে,”—ততক্ষণে তলোয়ারওয়ালা লম্বা লম্বা পা ফেলে তার বাড়ি পর্যন্ত পিঠ্টান দিয়েছে।
অসিলক্ষণ পণ্ডিতের মহা মুশকিল। একে তো কাটা নাকের যন্ত্রণা, তার ওপর সভায় বেরুলে সবাই খ্যাপায় “নাক-কাটা পণ্ডিত” বলে।
বেচারার এখন মুখ দেখানই দায়, সে সভায়ও যেতে পারে না, চাকরিও করতে পারে না। তাকে দেখলেই লোকে জিজ্ঞাসা করে, “ত লোঁ য়াঁর টা কেঁমন ছিঁলঁ!”
রাজার অসুখ
এক ছিল রাজা। রাজার ভারি অসুখ। ডাক্তার বাদ্য হাকিম কবিরাজ সব দলে দলে আসে আর দলে দলে ফিরে যায়। অসুখটা যে কি তা কেউ বলতে পারে না, অসুখ সারাতেও পারে না।
সারাবে কি করে? অসুখ তো আর সত্যিকারের নয়। রাজামশাই কেবলই বলেন ‘ভারি অসুখ’, কিন্তু কোথায় যে অসুখ তা আর কেউ খুঁজে পায় না! কতরকমের কত ওষুধ রাজামশাই খেয়ে দেখলেন, কিছতেই কিছ হল না। মাথায় বরফ দেওয়া হল, পেটে সেঁক দেওয়া হল, পায়ে জোঁক লাগান হল, হাতে মাদুলি বাঁধা হল, কিন্তু অসখের কোন কিনারাই হল না।
তখন রাজামশাই গেলেন খেপে। তিনি বললেন—“দূর করে দাও এই অপদার্থগুলোকে, আর ওদের পুঁথিপত্র যা আছে সব কিছু কেড়ে নিয়ে জ্বালিয়ে দাও।”