পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 এমনি করে চিকিৎসকেরা বিদায় হলেন। ভয়ে আর কেউ রাজার বাড়ির দিকেও যায় না। তখন সকলের ভাবনা হল, তাই তো, শেষটায় রাজামশাই কি বিনা চিকিৎসায় মারা পড়বেন?

 এমন সময় কোথা থেকে এক সন্ন্যাসী এসে বলল—“অসুখ সারাবার উপায় আমি জানি, কিন্তু সে ভারি শক্ত। তোমরা কি সে-সব করতে পারবে?”

 মন্ত্রী, কোটাল, সেনাপতি, পাত্র-মিত্র সবাই বলল—“কেন পারব না? খুব পারব। জান দিতে হয় জান দেব!”

 তখন সন্ন্যাসী বলল—“প্রথমে এমন একটি লোক খুঁজে আন যার মনে কোন ভাবনা নেই, যার মুখে হাসি লেগেই আছে, যে সব সময়ে, সব অবস্থাতেই খুশি থাকে।”

 সবাই বলল—“তারপর?”

 সন্ন্যাসী বলল—“তারপর সেই লোকের গায়ের জামা রাজামশাই যদি একটি দিন পরে থাকেন, আর সেই লোকের তোষকে যদি এক রাত্রি ঘুমিয়ে থাকেন, তা হলেই সব অসুখ সেরে উঠবে।”

 সবাই শুনে বলল—“এ তো চমৎকার কথা।”

 তাড়াতাড়ি রাজামশাইয়ের কাছে খবর গেল। তিনি শুনে বললেন—“আরে এই সহজ উপায়টা থাকতে এতদিন সবাই মিলে করছিল কি? এইটা কারো মাথায় আসে নি? যাও, এখনি খোঁজ করে সেই হাসি-ওয়ালা লোকটার জামা আর তোষক নিয়ে এস।”

 চারিদিকে লোক ছুটল, রাজ্যময় “খোঁজ-খোঁজ” রব পড়ে গেল, কিন্তু সে লোকের সন্ধান পাওয়া যায় না। যে যায় সেই ফিরে আসে আর বলে, “যার দুঃখ নেই, ভাবনা নেই, সর্বদাই হাসিমুখ, সর্বদাই খুশি মেজাজ, কই, তেমন লোকের তো দেখা পাওয়া গেল না।” সবার মুখে একই কথা।

 তখন মন্ত্রীমশাই রেগে বললেন—“এদের দিয়ে কি কোন কাজ হয়? এ মূর্খেরা খুঁজতেই জানে না।” এই বলে তিনি নিজেই বেরোলেন সেই অজানা লোকের খোঁজ করতে।

 বাজারের কাছে মস্ত এক দালানের সামনে তিনি দেখলেন, মেলা লোক জমে গিয়েছে আর এক বড়ো শেঠজি হাসিমুখে তাদের চাল, ডাল, পয়সা আর কাপড় দান করছে।

 মন্ত্রী ভাবলেন, ‘বাঃ এই লোকটাকে তো বেশ হাসি-খুশি দেখাচ্ছে, ওর তো অনেক টাকা পয়সাও আছে দেখছি। তা হলে আর ওর দুঃখই-বা কিসের, ভাবনাই-বা কিসের? ওরই একটা জামা আর তোষক চেয়ে নেওয়া যাক।’

 মন্ত্রীমশাই এইরকম ভাবছেন, ঠিক এই সময়ে একটা ভিখারি করেছে কি, ভিক্ষা নিয়ে শেঠজিকে সেলাম না করেই চলে যাচ্ছে। আর শেঠজির রাগ দেখে কে! তিনি ভিখারিকে গাল দিয়ে, জুতো মেরে, তার ভিক্ষা কেড়ে তাকে তাড়িয়ে দিলেন। ব্যাপার দেখে মন্ত্রীমশাই মাথা নেড়ে সেখান থেকে সরে পড়লেন।

 তারপর নদীর ধারে এক জায়গায় তিনি দেখলেন একটা লোক ভারি মজার ভঙ্গি করে নানারকম হাসির গান করছে আর তাই শুনে চারিদিকের লোকেরা হো হো করে হাসছে। মানুষ যে এতরকম হাসির ভঙ্গি করতে পারে তা মন্ত্রীমশায়ের জানা

দেশ-বিদেশের গল্প
১২৩