ওদিকে রাজামশাই ভাবতে রসেছেন—‘আমি থাকি রাজার হালে, ভালো ভালো খাই, কোন কিছুর অভাব নেই, লোকেরা সর্বদা তোয়াজ করছেই—আমার হল অসুখ! আর ঐ হতভাগা ফকির যার চাল-চুলো কিচ্ছু নেই, জামা নেই, কম্বল নেই, গাছতলায় পড়ে থাকে, যা পায় তাই খায়—সে কিনা বলে অসুখ-টসুখ কিচ্ছু মানেই না! সে ফকির হয়ে অসুখ উড়িয়ে দিতে পারল, আর আমি রাজা হয়ে পারব না?’
তার পর দিনই রাজা ঘুম থেকে উঠে পাত্র-মিত্র সবাইকে ডেকে বললেন—“যা হতভাগা মুখ্যুগুলো সব, সভায় বস্গে যা! তোরা কেউ কিচ্ছু করতে পারলি না, এখন এই দেখ আমার অসুখ আমি নিজেই সারিয়ে দিয়েছি। আজ থেকে আবার সভায় গিয়ে বসব। আর যে টুঁ শব্দটি করবে তার মাথা উড়িয়ে দেব!”
দানের হিসাব
এক ছিল রাজা। রাজা জাঁকজমকে পোশাক পরিচ্ছদে লাখ লাখ টাকা ব্যয় করেন, কিন্তু দানের বেলায় তাঁর হাত খোলে না।
রাজার সভায় হোমরা-চোমরা পাত্র-মিত্র সবাই আসে, কিন্তু গরিব-দঃখী পণ্ডিত সজ্জন এরা কেউ আসে না। কারণ সেখানে গুণীর আদর নাই, একটি পয়সা ভিক্ষা পাবার আশা নাই।
রাজার রাজ্যে দুর্ভিক্ষ লাগল, পূর্ব সীমানার লোকেরা অনাহারে মরতে বসল। রাজার কাছে খবর এল, রাজা বললেন, “এ-সমস্ত দৈবে ঘটায়, এর উপর আমার কোন হাত নাই।”
লোকেরা বলল, রাজভাণ্ডার থেকে সাহায্য করতে হুকুম হোক, আমরা দূর থেকে চাল কিনে এনে এ-যাত্রা রক্ষা পেয়ে যাই।”
রাজা বললেন, “আজ তোমাদের দুর্ভিক্ষ, কাল শুনব আর-এক জায়গায় ভূমিকম্প, পরশু শুনব অমুক লোকেরা ভারি গরিব, দুবেলা খেতে পায় না। সবাইকে সাহায্য করতে হলে রাজভাণ্ডার উজাড় করে রাজাকে ফতুর হতে হয়!”
শুনে সবাই নিরাশ হয়ে ফিরে গেল।
ওদিকে দুর্ভিক্ষ বেড়েই চলেছে। দলে দলে লোক অনাহারে মরতে লেগেছে। আবার দূত এসে রাজার কাছে হাজির। সে রাজসভায় হত্যা দিয়ে পড়ে বলল, “দোহাই মহারাজ, আর বেশি কিছু চাই না, দশটি হাজার টাকা দিলে লোকগুলো একবেলা আধপেটা খেয়ে বাঁচে।”
রাজা বললেন, “অত কট করে বেঁচেই বা লাভ কি? আর দশটি হাজার টাকা বুঝি বড় সহজ মনে করেছ?”