পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/১৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পড়ে, চোখ উলটিয়ে মূর্ছা যান আর কি! সবাই ধরাধরি করে অনেক কষ্টে তাঁকে রাজার কাছে নিয়ে হাজির করল।

 রাজা বললেন, “ব্যাপার কি?” মন্ত্রী বললেন, “মহারাজ, রাজকোষের প্রায় দু কোটি টাকা লোকসান হতে যাচ্ছে!” রাজা বললেন, “সে কিরকম?” মন্ত্রী বললেন, “মহারাজ, সন্ন্যাসী ঠাকুরকে যে ভিক্ষা দেবার হুকুম দিয়েছেন, এখন দেখছি তাতে ঠাকুর রাজভাণ্ডারের প্রায় দু কোটি টাকা বের করে নেবার ফিকির করেছে।”

 রাজা বললেন, “এত টাকা দেবার তো হুকুম হয় নি! তবে এরকম বে-হুকুম কাজ করছে কেন? বোলাও ভাণ্ডারীকো!”

 মন্ত্রী বললেন, “আজ্ঞে, সমস্তই হুকুমমত হয়েছে! এই দেখুন না দানের হিসাব।”

 রাজামশাই একবার দেখলেন,দুবার দেখলেন, তারপর ধড়্‌ফড়্‌ করে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন। তারপর অনেক কষ্টে তাঁর জ্ঞান হলে পর লোকজন ছটে গিয়ে সন্ন্যাসী ঠাকুরকে ডেকে আনল।

 ঠাকুর আসতেই রাজামশাই কেঁদে তাঁর পায়ে পড়লেন। বললেন, “দোহাই ঠাকুর, আমায় ধনে-প্রাণে মারবেন না। যা হয় একটা রফা করে আমার কথা আমায় ফিরিয়ে নিতে দিন।”

 সন্ন্যাসী ঠাকুর গম্ভীর হয়ে বললেন, “রাজ্যের লোক দুর্ভিক্ষে মরে, তাদের জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা চাই। সেই টাকা নগদ হাতে হাতে পেলে আমার ভিক্ষা পূর্ণ হল মনে করব।”

 রাজা বললেন, “সেদিন একজন এসেছিল, সে বলছিল দশ হাজার হলেই চলবে!”

 সন্ন্যাসী বললেন, “আজ আমি বলছি পঞ্চাশ হাজারের এক পয়সা কম হলেও চলবে না!”

 রাজা কাঁদলেন, মন্ত্রী কাঁদলেন, উজির-নাজির সবাই কাঁদল। চোখের জলে ঘর ভেসে গেল, কিন্তু ঠাকুরের কথা যেমন ছিল তেমনি রইল। শেষে অগত্যা রাজভাণ্ডার থেকে পঞ্চাশটি হাজার টাকা গুণে ঠাকুরের সঙ্গে দিয়ে রাজামশায় নিষ্কৃতি পেলেন।

 দেশময় রটে গেল, দুর্ভিক্ষে রাজকোষ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা দান করা হয়েছে। সবাই বললে, “দাতাকর্ণ মহারাজ!”

সন্দেশ—১৩২৯
সু. স. র.—১৭
১২৯