পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/১৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কিরকম স্বভাবের লোক ছিলেন?” বুড়ো বলল, “তাঁরা সবাই ছিলেন অসাবধান আর খামখেয়ালি। সারাটি বছর সবাই শুধু জাঁকজমকে আমোদে-আহ্লাদে দিন কাটাতেন—বছর শেষে কি হবে কেউ সে কথা ভাবতেন না।”

 নতুন রাজা মন দিয়ে সব শুনলেন, বছরের শেষে তাঁর কি হবে এই কথা ভেবে ক’দিন তাঁর ঘুম হল না!

 তারপর সে দেশের সকলের চেয়ে জ্ঞানী আর পণ্ডিত যারা, তাদের ডেকে আনা হল, আর রাজা তাদের কাছে মিনতি করে বললেন, “আপনারা আমাকে উপদেশ দিন—যাতে বছর শেষে সেই সর্বনেশে দিনের জন্য প্রস্তুত হতে পারি।”

 তখন সবচেয়ে প্রবীণ বৃদ্ধ যে, সে বলল, “মহারাজ, শূন্য হাতে আপনি এসেছিলেন, শূন্য হাতেই আবার সেই দেশে যেতে হবে—কিন্তু এই এক বছর আপনি আমাদের যা ইচ্ছা হয় তাই করাতে পারেন। আমি বলি—এই বেলা রাজ্যের ওস্তাদ লোকদের সেই দেশে পাঠিয়ে সেখানে বাড়ি ক’রে, বাগান ক’রে, চাষবাসের ব্যবস্থা ক’রে চারিদিক সুন্দর করে রাখুন। ততদিনে ফলে ফুলে দেশ ভরে উঠবে, সেখানে লোকের যাতায়াত হবে। আপনার এখানকার রাজত্ব শেষ হতেই সেখানে আপনি সুখে রাজত্ব করবেন। বৎসর তো দেখতে দেখতে চলে যাবে, অথচ কাজ আপনার ঢের; কাজেই বলি, এইবেলা খেটে-খুটে সব ঠিক ক’রে নিন।” রাজা তখনই হরকুম দিয়ে লোক-লস্কর, জিনিসপত্র, গাছের চারা, ফলের বীজ, আর বড়-বড় কলকব্জা পাঠিয়ে, আগে থেকে সেই মরুভূমিকে সুন্দর ক’রে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখলেন।

 তারপর বছর যখন ফুরিয়ে এল, তখন প্রজারা তাঁর ছত্র মুকুট রাজদণ্ড সব ফিরিয়ে নিল, তাঁর রাজার পোশাক ছাড়িয়ে এক বছর আগেকার সেই সামান্য কাপড় পরিয়ে, তাঁকে জাহাজে তুলে সেই মরভূমির দেশে রেখে এল। কিন্তু সে দেশ আর এখন মরুভূমি নেই—চারদিকে ঘর বাড়ি, পথ ঘাট, পুকুর বাগান। সে দেশ এখন লোকে লোকারণ্য। তারা সবাই এসে ফূর্তি ক’রে শঙ্খঘণ্টা বাজিয়ে তাঁকে নিয়ে সিংহাসনে বসিয়ে দিল। এক বছরের রাজা সেখানে জন্ম ভরে রাজত্ব করতে লাগলেন।

সন্দেশ—১৩২৪


কার দোষ

 এক রাজা তাঁর বাড়ির পাশে একটা প্রকাণ্ড উচু দেয়াল তুলবার হুকুম দিলেন। দেয়ালটি কিন্তু শেষ হওয়ামাত্র হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল। রাজা তো রেগেই অস্থির! তখনই হুকুম দিলেন, “বেঁধে আনো রাজমিস্ত্রিকে! এখনই তাকে আচ্ছা করে ঠ্যাঙা দেওয়া হোক আর কয়েদ করা হোক।

 রাজমিস্ত্রিকে ধরে আনা হতেই সে বলল, “মহারাজ! আমার কি দোষ? সুরকির মসলা খারাপ ছিল, আমি কি করব?”

 তখনই লোক গিয়ে সুরকিওয়ালাকে ধরে নিয়ে এল। সে বলল, “দোহাই

দেশ-বিদেশের গল্প
১৩১