পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/১৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হুজুর! আমার কোন দোষ নেই। আমি তো মসলা ঠিক করে মেশাতে, কত চেষ্টা করলাম, কিন্তু মেশাবার পাত্রটা এমন বিশ্রী করে বানিয়েছে কুমোরে, যে, সেটা দিয়ে কিছুতেই ভালো করে মেশানো যায় না।”

 অমনি আবার লোক ছটলো কুমোরকে ধরে আনতে। কুমোর এসে কেঁদে বলল, “মহারাজ, আমার কি দোষ? একে তো তাড়াতাড়ি মসলার গামলা গড়তে দেওয়া হয়েছিল, তার ওপর আবার গড়বার সময়ে —একটি মেয়ে আমার বাড়ির সামনে দিয়ে ছুটে যেতে-যেতে আমাকে এমনি চমকে দিল, যে পাত্রটার গড়নই খারাপ হয়ে গেল।”

 মেয়েটিকে তখনই রাজার লোকেরা গিয়ে ধরে নিয়ে এলো। সে বলল, “মহারাজ! আমার কোনই দোষ নেই! ও বাড়ির সামনে দিয়ে যাবারও আমার কোন দরকার ছিল না। একজন স্যাকরাকে আমার কানের দুল গড়তে দিয়েছিলাম। বাড়িতে এসে দুলজোড়া দিয়ে যাবার কথা ছিল তার। কিন্তু সেদিন আমার চলে যাবার কথা; তবুও কিছুতে সে দুল দিল না দেখে আমাকে তার বাড়িতে ছুটে যেতে হয়েছিল। কুমোরকে চমকে দেবার কোন উদ্দেশ্যই ছিল না আমার।”

 রাজার হুকুমে স্যাকরাকে ধরে আনা হল। সে বলল, “মহারাজ, আমার কি দোষ বলুন? মুক্তোওয়ালা মুক্তো দিয়ে যায় নি সময় মতো—সেজন্যই তো আমার দুল গড়তে দেরি হল।”

 মুক্তোওয়ালাকে ধরে আনা হল; সে বলল, “মহারাজ! আমি তো মুক্তো পাবার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু ডুবরিতে ভালো মুক্তো তোলে নি, তার আর আমি কি করতে পারি বলুন?”

 তখন ডুবরিকে ডাকা হল। সে এসে বলল, “মহারাজ! আমার দোষ এর মধ্যে কি হল বলুন? শুক্তিতে যদি ভালো মুক্তো না জন্মায় তো আমি আর কোত্থেকে আনি?”

 তখন সকলে মাথা চুলকোতে আরম্ভ করল। শুক্তি তো সমুদ্রের তলায়! কাজেই শেষ পর্যন্ত আর কাউকে শাস্তি দেওয়াই হল না!

সন্দেশ—১৩২৮


দুই বন্ধু

 এক ছিল মহাজন, আর এক ছিল সওদাগর। দুজনে ভারি ভাব। একদিন মহাজন এক থলি মোহর নিয়ে তার বন্ধুকে বলল, “ভাই, ক’দিনের জন্য শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছি; আমার কিছু টাকা তোমার কাছে রাখতে পারবে?” সওদাগর বলল, “পারব না কেন? তবে কি জান, পরের টাকা হাতে রাখা আমি পছন্দ করি না। তুমি বন্ধু মানুষ, তোমাকে আর বলবার কি আছে, আমার ঐ সিন্ধুকটি খুলে তুমি নিজেই তার মধ্যে তোমার টাকাটা রেখে দাও—আমি ও টাকা ছোঁব না।” তখন মহাজন তার

১৩২
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী