পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

থলে ভরা মোহর সেই সওদাগরের সিন্ধুকের মধ্যে রেখে নিশ্চিন্ত মনে বাড়ি ফিরে গেল।

 এদিকে হয়েছে কি, বন্ধু যাবার পরেই সওদাগরের মনটা কেমন উসখুস করছে। সে কেবলই ঐ টাকার কথা ভাবছে আর মনে হচ্ছে যে বন্ধু না জানি কত কি রেখে গেছে! একবার খুলে দেখতে দোষ কি? এই ভেবে সে সিন্ধুকের ভেতর উঁকি মেরে থলিটা খুলে দেখল—থলি ভরা চকচকে মোহর! এতগুলো মোহর দেখে সওদাগরের ভয়ানক লোভ হল—সে তাড়াতাড়ি মোহরগলো সরিয়ে তার জায়গায় কতগুলো পয়সা ভরে থলিটাকে বন্ধ ক’রে রাখল।

 দশদিন পরে তার বন্ধু যখন ফিরে এল, তখন সওদাগর খুব হাসিমুখে তার সঙ্গে গল্পসল্প করল, কিন্তু তার মনটা কেবলই বলতে লাগল, ‘কাজটা ভালো হয় নি। বন্ধু এসে বিশ্বাস করে টাকাটা রাখল, তাকে ঠকানো উচিত হয় নি।’ এ কথা সে কথার পর মহাজন বলল, “তাহলে বন্ধু, আজকে টাকাটা নিয়ে এখন উঠি—সেটা কোথায় আছে?” সওদাগর বললে, “হ্যাঁ বন্ধু, সেটা নিয়ে যাও। তুমি যেখানে রেখেছিলে সেইখানেই পাবে—আমি থলিটা আর সরাই নি।” বন্ধু তখন সিন্ধুক খুলে তার থলিটা বের ক’রে নিল। কিন্তু কি সর্বনাশ! থলি ভরা মোহর ছিল, সব গেল কোথায়? সব যে কেবল পয়সা! মহাজন মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল!

 সওদাগর বলল, “ওকি বন্ধু! মাটিতে বসলে কেন?” বন্ধ বলল, “ভাই, সর্বনাশ হয়েছে! আমার থলিভরা মোহর ছিল—এখন দেখছি একটাও মোহর নাই, কেবল কতগুলো পয়সা!” সওদাগর বলল, “তাও কি হয়? মোহর কখনো পয়সা হয়ে যায়?” . সওদাগর চেষ্টা করছে এরকম ভাব দেখাতে যেন সে কতই আশ্চর্য হয়েছে; কিন্তু তার বন্ধু দেখল তার মুখখানা একেবারে ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। ব্যাপারটা বুঝতে তার আর বাকি রইল না—তবু সে কোনরকম রাগ না দেখিয়ে হেসে বলল, “আমি তো মোহর মনে করেই রেখেছিলাম—এখন দেখছি কোথাও কোন গোল হয়ে থাকবে। যাক যা গেছে তা গেছেই—সে ভাবনায় আর কাজ নেই।” এই বলে সে সওদাগরের কাছে বিদায় নিয়ে পয়সার থলি বাড়িতে নিয়ে গেল। সওদাগর হাঁফ ছেড়ে বাঁচল।

 দু’মাস পরে হঠাৎ একদিন মহাজন তার বন্ধুর বাড়ি এসে বলল, “বন্ধু আজ আমার বাড়িতে পিঠে হচ্ছে—বিকেলে তোমার ছেলেটিকে পাঠিয়ে দিও!” বিকালবেলা সওদাগর তার ছেলেকে নিয়ে মহাজনের বাড়িতে রেখে এল, আর বলল, “সন্ধ্যার সময় এসে নিয়ে যাব।” মহাজন করল কি, ছেলেটার পোশাক বদলিয়ে তাকে কোথায় লুকিয়ে রাখল—আর একটা বাঁদরকে সেই ছেলের পোশাক পরিয়ে ঘরের মধ্যে বসিয়ে দিল।

 সন্ধ্যার সময় সওদাগর আসতেই তার বন্ধু এসে মুখখানা হাঁড়ির মতো করে বলল, “ভাই! একটা বড় মুশকিলে পড়েছি। তোমার ছেলেটিকে তুমি যখন দিয়ে গেলে, তখন দেখলাম দিব্যি কেমন নাদুস-নুদুস ফুট্‌ফুটে চেহারা—কিন্তু এখন দেখছি কিরকম হয়ে গেছে—ঠিক যেন বাঁদরের মতো দেখাচ্ছে! কি করা যায় বল তো বন্ধু!” ব্যাপার দেখে সওদাগরের তো চক্ষুস্থির! সে বলল, “কি পাগলের মতো বকছ? মানুষ কখনো বাঁদর হয়ে যায়?” মহাজন অত্যন্ত ভালো মানষের মতো বলল, “কি

দেশ-বিদেশের গল্প
১৩৩