মালিক তার সঙ্গে লড়তে চায়।” এই বলে সে হাতিটাকে ছুঁড়ে তাদের উঠানে ফেলে দিল।
ব্যাপার দেখে বাড়ির লোকের চক্ষস্থির! কিন্তু মুখে-মারির সেয়ানা খোকা হেঁড়ে গলায় চেঁচিয়ে উঠল, “ও মাগো! দুষ্টু লোকটা আমার দিকে একটা ইঁদুর ফেলেছে! কি করি বল তো?” তার মা বলল,”কিছু ভয় নেই। তোমার বাবা এসে ওকে উচিত শিক্ষা দেবেন। এখন ইঁদুরটাকে ঝাঁট দিয়ে ফেলে দাও।”
এই কথা বলামাত্র ঝাঁটার ঝট্পট্ শব্দ হ’লো আর ছেলেটা বলল, “ঐ যা! ইঁদুরটা নর্দমায় পড়ে গেল।” ঠুকে-মারি ভাবল, ‘যার খোকা এরকম, সে নিশ্চয়ই আমার উপযুক্ত জুড়ি হবে।’
বাড়ির সামনে একটা তালগাছ ছিল, সেইটা উপ্ড়ে নিয়ে ঠুকে-মারি হেঁকে বলল, “ওরে খোকা, তোর বাবাকে বলিস যে আমার একটা ছড়ির দরকার ছিল, তাই এটা নিয়ে চললাম।” খোকা তৎক্ষণাং বলে উঠল, “ওমা দেখেছ? ঐ দুষ্টু লোকটা বাবার খড়্কে কাঠি নিয়ে পালিয়ে গেল।” খড়্কে কাঠি শুনে ঠুকে-মারির চোখ দুটো আলুর মতো বড় হয়ে উঠল। সে ভাবল, ‘দরকার নেই বাপু, ও-সব লোকের সঙ্গে ঝগড়া করে!’ সে তখনই হন্ হন্ করে সে গ্রাম ছেড়ে নিজের গ্রামে পালিয়ে গেল।
মুখে-মারি বাড়িতে এসে ছেলেকে জিজ্ঞাসা করল, “কিরে! লোকটা গেল কই?” খোকা বলল, “সে ঐ তালগাছটা নিয়ে পালিয়ে গেল।” “তুই তাকে কিছু বললি না?” “নিয়ে গেল, তা আমি আর তাকে বলব কি?” এই কথা শুনে মুখে-মারি ভয়ানক রেগে বলল, “হতভাগা! তুই আমার ছেলে হয়ে আমার নাম ডোবালি! দরকার হলে দুটো কথা বলতে পারিস্ নে? যা! আজই তোকে গঙ্গায় ফেলে দিয়ে আসব।” এই বলে সে অপদার্থ ছেলেকে গঙ্গায় ফেলে দিতে চলল।
কিন্তু গঙ্গা তো গ্রামের কাছে নয়—সে অনেক দূর। মুখে-মারি হাঁটছে হাঁটছে আর ভাবছে ছেলেটা যখন কান্নাকাটি করবে, তখন তাকে বলবে, ‘আচ্ছা, এবার তোকে ছেড়ে দিলাম।’ কিন্তু ছেলেটা কাঁদেও না, কিছু বলেও না, সে বেশ আরামে কাঁধে চড়ে ‘গঙ্গায়’ চলেছে। তখন মুখে-মারি তাকে ভয় দেখিয়ে বলল, “আর দেরি নেই, এই গঙ্গা এসে পড়ল বলে।” ছেলেটা চট্ করে বলে উঠল, “হ্যাঁ বাবা। বড্ড জলের ছিটা লাগছে।” শুনে মুখে-মারির চক্ষুস্থির! সে তখনই ছেলেকে কাঁধ থেকে নামিয়ে বলল, “শিগ্গির বল, সত্যি করে, লোকটাকে তুই কিছু বলেছিস কি না?” ছেলে বলল, “ওকে তো আমি কিছু বলি নি। আমি মাকে চেঁচিয়ে বললাম দুষ্টু লোকটা বাবার খড়্কে কাঠি নিয়ে পালিয়ে গেল।” মুখে-মারি এক গাল হেসে তার পিঠ থাব্ড়ে বলল, “সাবাস্ ছেলে! বাপ্কা বেটা!”