পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করতেন। তাছাড়া মাসে একবার করে সুকুমার এঁদের নিয়ে চড়ইভাতি, স্টিমারযাত্রা প্রভৃতি আনন্দোৎসব করতেন।

 তাঁরই প্রস্তাবে ১৯১০ সালে ব্রাহ্ম যুবসমিতির মাসিক মুখপত্র ‘আলোক’ বেরোলো। দাম হলো প্রতি সংখ্যা চার আনা কিন্তু প্রথম সংখ্যাটি সুকুমার নিলামে চড়ালেন এবং তাঁর মংলুমামা (দ্বারকানাথ গংগোপাধ্যায়ের পুত্র প্রফুল্লচন্দ্র গংগোপাধ্যায়) দশ টাকায় কিনে নিলেন। দুঃখের বিষয়, সুকুমার বিলেত যাওয়ার পর এই পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়।

 ফিজিক্স ও কেমিস্ট্রিতে ডবল অনার্স নিয়ে বি. এস-সি, পাশের পর গুরুপ্রসন্ন বৃত্তি পেয়ে তিনি আলোকচিত্র ও ছাপাখানার প্রযুক্তিবিদ্যায় উচ্চতর শিক্ষালাভের জন্য বিদেশ যাত্রা করলেন। ১৯১১ সালের অক্টোবর মাসে ‘এরেবিয়া’ জাহাজে গেলেন এবং শিক্ষাসমাপ্তান্তে য়ুরোপের কয়েকটা দেশে ঘুরে ১৯১৩র শেষাশেষি দেশে ফিরে এলেন।

 আলোকচিত্র ও ছাপার কাজ ভালো করে শিখে ইউ. রায় এণ্ড সন্সের কাজের আরো উন্নতি করা তাঁর একটা উদ্দেশ্য ছিল, আরেকটা ছিল উপেন্দ্রকিশোরের উদ্ভাবিত পদ্ধতিগুলি ওদেশের বিশেষজ্ঞদের সামনে প্রামাণ্যভাবে তুলে ধরা।


 প্রবাসে: কলকাতা থেকে ট্রেনে বোম্বে গিয়ে সুকুমার জাহাজ ধরলেন। লণ্ডনে পৌঁছে তিনি উঠলেন ২১ নম্বর ক্রমওয়েল রোডে নর্থব্রুক সোসাইটির হোস্টেলে। উপেন্দ্রকিশোর তাঁর নিজের কাজের সূত্রে পেনরোজের পত্রিকার সঙ্গে পরিচিত ছিলেন, ওই পত্রিকার সম্পাদক মিঃ গ্যাম্বলের চিঠি নিয়ে সুকুমার লণ্ডনের L. C. C. School of Photo-Engraving and Lithographyতে বিশেষ ছাত্র হিসেবে কাজ আরম্ভ করলেন অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি। অধ্যক্ষ মিঃ নিউটন, মিঃ গ্রিগ বলে লিথোগ্রাফি ও কলোটাইপের খুব ভালো শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়ার ব্যবস্থা করে দিলেন। ঠিক হল, প্রথমে তিনি যে-সব পদ্ধতি আগে দেখেন নি সে সম্বন্ধে কিছু, কার্যিক অভিজ্ঞতা অর্জন করে তারপর কয়েকটা ছাপাখানা ঘুরে ঘুরে দেখবেন। অধ্যক্ষ সে-সব জায়গায় “Son of a Celebrated photo-engraver” বলে পরিচয়পত্র দিয়েছিলেন। তাছাড়া সকুমার নিজের স্কুলের স্টুডিওতে অধ্যক্ষ এবং ছাত্রদের সামনে উপেন্দ্রকিশোরের উদ্ভাবিত বিশেষ পদ্ধতিও দেখিয়েছিলেন। তাঁকে স্কুলের সাধারণ ক্লাসে যেতে হতো না। কলোটাইপ এণ্ড লিথোগ্রাফির ঘরে কাজ করতেন, ঘুরে ঘুরে কতকগুলো বড়-বড় প্রতিষ্ঠানের কাজ দেখতেন আর ফোটোগ্রাফিক সোসাইটির লাইব্রেরিতে পড়াশনো করতেন। নিজের তোলা ছবি বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে তিনি ভালো ফোটোগ্রাফার হিসেবে পরিচিত হন এবং দেশে ফিরেও এই যোগাযোগ বজায় রাখেন। কয়েক বছর পরে তিনি রয়াল ফোটোগ্রাফিক সোসাইটির প্রথম ভারতীয় সদস্য নির্বাচিত হন।

 এইরকমের শিক্ষানবিশির কাজেই তিনি ১৯১২-র ফেব্রুয়ারিতে শিল্পনগরী ম্যাঞ্চেস্টারে গিয়ে ওখানকার স্কুল অব টেকনোলজির বিশেষ ছাত্র হিসেবে স্টুডিও ও লেবরেটরিতে কাজ করে মে-মাসের প্রথমে আবার লণ্ডনে তাঁর পুরনো স্কুলে যোগ দেন। এতদিনে তিনি দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাসের পথে অনেকটা এগিয়েছেন, কঠিন ও সূক্ষ্ম কাজ হাতে নিতে ভরসা পাচ্ছেন এবং ওদের কাগজপত্রে

জীবনী
১১