সঙ্গীহারা
সবাই নাচে, ফুর্তি করে, সবাই গাহে গান,
একলা বসে হাঁড়িচাঁচার মুখটি কেন ম্লান?
দেখছ নাকি আমার সাথে সবাই করে আড়ি
তাই তো আমার মেজাজ খ্যাপা মুখটি এমন হাঁড়ি।
তাও কি হয়! ওই যে মাঠে শালিখ পাখি ডাকে
তার কাছে কই যাও নি তো ভাই, শুধাও নি তো তাকে।
শালিখ পাখি বেজায় ঠ্যাঁটা চেঁচায় মিছিমিছি,
হল্লা শুনে হাড় জ্বলে যায় কেবল কিচিমিচি।
মিষ্টি সুরে দোয়েল পাখি জুড়িয়ে দিল প্রাণ
তার কাছে কই বসলে না তো শুনলে না তার গান!
দোয়েল পাখির ঘ্যানঘ্যানানি আর কি লাগে ভালো?
যেমন রূপে, তেমন গুণে, তেমনি আবার কালো।
রূপ যদি চাও যাও না কেন মাছরাঙ্গার কাছে,
অমন খাসা রঙের বাহার আর কি কারো আছে?
মাছরাঙ্গা! তারেও কি আর পাখির মধ্যে ধরি?
রকম-সকম সঙের মতন, দেমাক দেখে মরি!
পায়রা, ঘুঘু, কোকিল, চড়াই, চন্দনা, টুনটুনি,
কারে তোমার পছন্দ হয়, সেই কথাটি শুনি?
এইগুলো সব ছ্যাবলা পাখি, নেহাৎ ছোট জাত,
দেখলে আমি তফাৎ হটি অমনি পঁচিশ হাত!
এতক্ষণে বুঝতে পারি ব্যাপারখানা কি যে—
সবার তুমি খুঁৎ পেয়েছ, নিখুঁৎ কেবল নিজে!
মনের মতন সঙ্গী তোমার কপালে নেই লেখা,
তাইতে তোমায় কেউ পোঁছে না, তাইতে থাক একা॥
সন্দেশ-১৩২৩
পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/১৬০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ কবিতা
১৫৫