পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/১৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

খোকার ভাবনা

মোমের পুতুল, লোমের পুতুল, আগলে ধরে হাতে,
তবুও কেন হাবলা ছেলের মন ওঠে না তাতে?
একলা জেগে এক মনেতে চুপটি করে বসে
আনমনা সে কিসের তরে আঙুলখানি চোষে?
নাইকো হাসি, নাইকো খেলা, নাইকো মুখে কথা,
আজ সকালে হাবলাবাবুর মন গিয়েছে কোথা?
ভাবছে বুঝি দুধের বোতল আসছে নাকো কেন?
কিংবা ভাবে মায়ের কিসে হচ্ছে দেরি হেন।
ভাবছে এবার দুধ খাবে না, কেবল খাবে মুড়ি,
দাদার সাথে কোমর বেধে করবে হুড়োহুড়ি,
ফেলবে ছুঁড়ে চামচটাকে পাশের বাড়ির চালে,
নাহয় তেড়ে কামড়ে দেবে দুষ্টু দাদুর গালে।
কিংবা ভাবে একটা কিছু ঠকতে যদি পেতো,
পুতুলটাকে করতো ঠুকে একেবারে থেঁতো।

সন্দেশ-১৩২৯

নিঃস্বার্থ

গোপলাটা কি হিংসুটে মা! খাবার দিলেম ভাগ করে,
কল্লে নাকো মুখেও কিছু, ফেল্লে ছুঁড়ে রাগ করে।
জ্যাঠাইমা যে মেঠাই দিলেন ‘দুই ভায়েতে খাও' বলে—
দশটি ছিল, একটি তাহার চাখতে নিলেম ‘ফাও’ বলে,
আর যে নটি, ভাগ করে তায় তিনটে দিলেম গোপলাকে—
তবুও কেবল হ্যাংলা ছেলে আমার ভাগেই চোখ রাখে।
বুঝিয়ে বলি, ‘কাঁদিস কেন? তুই যে নেহাৎ কনিষ্ঠ,
বয়স বুঝে সামলে খাবি, তা নৈলে হয় অনিষ্ট।
তিনটি বছর তফাৎ মোদের, জ্যায়দা হিসাব গুণতি তাই,
মোন্দা আমার ছয়খানি হয়, তিন বছরে তিনটি পাই।
তাও মানে না, কেবল কাঁদে—স্বার্থপরের শয়তানি,
শেষটা আমায় মেঠাইগুলো খেতেই হল সবখানি।

সন্দেশ-১৩২৬
১৬৮
সুকুমার সমগ্র রচনাবলী