এমনি করে দুদিন যায়, দশদিন যায়, শেষটায় একদিন সর্দার ব্যাঙের গিন্নি বললেন, “ছাই রাজা! কর্তা যে সেদিন রাজা দেখলেন, এর চেয়ে সে অনেক ভালো। এ রাজা নড়েও না চড়েও না, এদিকেও দেখে না ওদিকেও দেখে না—ছাই রাজা! তাই শুনে সবাই বলল, “ছাই রাজা! ছাই রাজা!—নড়েও না চড়েও না, দেখেও না শোনেও না—ছাই রাজা!” তখন আবার বুড়ো ব্যাঙ গাছের উপর চড়ে বলল, “ভাই সকল এসো আমরা দরখাস্ত করি—আমাদের ভালো রাজা চাই।” আবার সবাই গোল হয়ে বসে আকাশপানে চোখ তাকিয়ে নানান সুরে ডাকতে লাগল—“রাজা চাই! রাজা চাই! ভালো রাজা—নতুন রাজা।” তাই শুনে ব্যাঙ দেবতা জেগে বললেন, “ব্যাপারখানা কি? এই তো সেদিন তোদের রাজা দিলাম, এর মধ্যে আবার নতুন কি হল?” ব্যাঙেরা বলল, “ও রাজা ছাই রাজা! ও রাজা বিশ্রী রাজা—ও রাজা নড়েও না চড়েও না—ও রাজা চাই না চাই না চাই না চাই না চাই না চাই না—” ব্যাঙ দেবতা বললেন, “থাম্ তোরা থাম্—নতুন রাজা দিচ্ছি।” এই ব’লে, একটা বককে সেই পুকুরের ধারে নামিয়ে দিয়ে তিনি বললেন, “এই নে তোদের নতুন রাজা।”
তাই না দেখে, ব্যাঙেরা সব অবাক হয়ে বলতে লাগল, “বাপ রে বাপ! কি প্রকাণ্ড রাজা চক্চকে ঝক্ঝকে ধব্ধবে সাদা! ভালো রাজা! সুন্দর রাজা! রাজা রাজা রাজা রাজা।” বকের তখন খিদে ছিল না, মাছ খেয়ে পেট ভরা ছিল, তাই সে কিছু বলল না; খালি চোখ মিটমিট করে একবার এদিকে তাকাল, একবার ওদিকে তাকাল, তারপর এক পা তুলে চুপচাপ করে দাঁড়িয়ে রইল। তাই দেখে ব্যাঙেদের উৎসাহ আর ধরে না, তারা প্রাণ খুলে গলা ছেড়ে গাইতে লাগল। সকাল গেল, দুপুর গেল, বিকেল হল, সন্ধে হল—তারপর ঘুটঘুটে অন্ধকার রাত্রি এল—তখন ব্যাঙেদের গান গাওয়া বন্ধ হল।
তার পরের দিন সকালবেলায় উঠে যেমনি তারা গান ধরেছে, অমনি বক রাজা এসে একটা গোব্দামতন মোটা ব্যাঙকে টপাস্ করে মুখের মধ্যে পুরে দিয়েছে! তাই দেখে ব্যাঙেরা সব হঠাৎ কেমন মুষড়ে গেল—তাদের ‘রাজা রাজা' গান একেবারে পাঁচ সুর নেমে গেল। বকরাজা ব্যাঙটিকে দিয়ে জলযোগ করে একটি ঠ্যাঙ মুড়ে ধ্যান করতে লাগলেন।
এমনি করে এক-এক বেলায় এক-একটি ব্যাঙ বকরাজার পেটের মধ্যে যায়। ব্যাঙ মহলে হৈ চৈ লেগে গেল। সবাই মিলে সভায় ব’সে যুক্তি করে বলল, “এটা বড় অন্যায় হচ্ছে। রাজাকে বুঝিয়ে বলা দরকার, সে হল আমাদের রাজা, সে এমন করলে আমরা পালাই কোথা?” কিন্তু বুঝিয়ে বলবে কে? সর্দার গিন্নি বললেন, “তার জন্য ভাবছিস কেন? এতে আর মুশকিল কিসের? এই দেখ না, আমিই গিয়ে বলে আসছি।”
সর্দার গিন্নি বকরাজার পায়ের সামনে গ্যাঁট হয়ে বসে, হাতমুখ নেড়ে কড়কড়ে গলায় বলতে লাগলেন, “ও রাজা, তোর ভাগ্যি ভালো, তুই আমাদের রাজা হলি। তোর চোখ ভালো, মুখ ভালো, ঝক্ঝকে রঙ ভালো, তোর এক পা-ও ভালো, দুই পা-ও ভালো, কেবল ঐটি তোর ভালো নয়—তুই আমাদের খাস কেন? শামুক আছে শামুক খা না, পোকা-মাকড় প্রজাপতি তাও তো তুই খেতে পারিস। রাজা হয়ে আমাদের খেতে চাস? ছ্যা ছ্যা ছ্যা ছ্যা—রাম রাম রাম রাম—অমন আর কক্ষনো করিস নে।” বক দেখলে তার পায়ের কাছে দিব্যি একটা নাদুস্ননুদুস্ ব্যাঙ, তার