নরম নরম গোলগাল চেহারা! টপ করে বকরাজার জিভ দিয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল আর খপ্ করে সর্দার গিন্নি তার মুখের মধ্যে মিলিয়ে গেলেন!
ব্যাঙেদের মুখে আর কথাটি নেই। সবাই তাড়াতাড়ি চট্পট্ সরে বসে বড়বড় হাঁ করে তাকিয়ে রইল। পরে সর্দার ব্যাঙ রুমাল দিয়ে চোখ মুছে বলল, “পাজি রাজা! লক্ষ্মীছাড়া দুষ্টু রাজা!” তাই শুনে সবাই এক সঙ্গে আকাশ ফাটিয়ে চোঁচাতে লাগল, “পাজি রাজা! দুষ্টু রাজা!—চাই না চাই না চাই না চাই না—রাজা চাই না, রাজা চাই না।”
ব্যাঙ দেবতা জেগে বললেন, “দূর ছাই! আবার কি হল?” ব্যাঙেরা বলল, “বাপ রে বাপ্! বাপ রে বাপ্! কি দুষ্টু রাজা! নিয়ে যাও, নিয়ে যাও, নিয়ে যাও!”
তখন ব্যাঙ দেবতা হুশ্ করে তাড়া দিতেই বকরাজা পাখা মেলে উড়ে পালাল। আর ব্যাঙেরা সব বাসায় গিয়ে বলতে লাগল, “গ্যাঁক্ গ্যাঁক্ গ্যাঁক্—বাপ্ বাপ্ বাপ্—ছ্যা ছ্যা ছা—রাজাটাজা আর কক্ষনো চাইব না।”
পুতুলের ভোজ
পুতুলের মা খুকি আজ ভয়ানক ব্যস্ত। আজ কিনা ছোট্ট পুতুলের জন্মদিন, তাই খুব খাওয়ার ধুম লেগেছে। ছোট্ট টেবিলের ওপর ছোট্ট-ছোট্ট থালাবাটি সাজিয়ে, তার মধ্যে কি চমৎকার করে খাবার তৈরি করে রাখা হয়েছে। আর চারদিকে সত্যিকারের ছোট্ট-ছোট্ট চেয়ার সাজানো রয়েছে, পতুলেরা বসে খাবে বলে।
খুকির যে ছোটদাদা, তার কিনা সাড়ে চার বছর বয়স, তাই সে বলে, “পুতুলরা খেতেই পারে না, তাদের আবার জন্মদিন কি?” কিন্তু খুকি সে কথা মানবে কেন? সে বলে, “পুতুলরা সব পারে। কে বলল পারে না? কে বলল যে কক্ষনো কোনদিন তারা কথা বলে না, কক্ষনো কোনদিন খায় না?”—খোকাপুতুলের যখন অসুখ করেছিল তখন সে কি ‘মা, মা’ বলে কাঁদতো না? নিশ্চয়ই কাঁদতো। তা না হলে খুকি জানলো কি করে যে তার অসুখ করেছে? খুকির দাদা এ-সবের জবাব দিতে পারে না, তাই সে ‘বোকা মেয়ে, হাঁদা মেয়ে’ বলে মুখ ভেংচিয়ে চলে যায়।
খুকি গেল তার মার কাছে নালিশ করতে। মা সব শুনেটুনে বললেন, “সব সময়ে সকলের কাছে কি পুতুলরা জ্যান্ত হয়? যেদিন দেখবি পতুল সত্যি করে খাবার খাচ্ছে, সেদিন ছোড়দাকে ডেকে দেখাস।” খুকি বলল, “আজকে যদি ওরা জেগে উঠে খাবার খেতে থাকে, তা হলে কি মজাই হবে! আমার বোধ হয় রাত্তিরে যখন আমরা ঘুমিয়ে থাকি, তখন তাদের দিন হয়! তা না হলে আমরা তো দেখতে