আছে।” শুনে ভয়ে হিংসুটির বুকের মধ্যে ধড়াস্ ধড়াস্ করে উঠ্ল। সে কাঁদ-কাঁদ গলায় বলল, “সেটার কি লাল জামা আর লাল জুতো পরানো—মাথায় কালো কালো কোঁকড়ান চুল ছিল?” মা বললেন, “হ্যাঁ—তুই দেখেছিস্ নাকি?”
হিংসুটির মুখে আর কথা নেই! সে খানিকক্ষণ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে তারপর একেবারে ভ্যাঁ করে কেঁদে এক দৌড়ে সেখান থেকে পালিয়ে গেল।
এর পরে যদি তার হিংসে আর দুষ্টুমি না কমে, তবে আর কি করে কমবে?
পেটুক
“হরিপদ! ও হরিপদ!”
হরিপদর আর সাড়া নেই। সবাই মিলে এত চেঁচাচ্ছে, হরিপদ আর সাড়াই দেয় না। কেন, হরিপদ কালা নাকি? কানে কম শোনে বুঝি? না, কম শুনবে কেন—বেশ দিব্যি পরিষ্কার শুনতে পায়। তবে হরিপদ কি বাড়ি নেই? তা কেন? হরিপদ মুখভরা ক্ষীরের লাড়ু, ফেলতেও পারে না, গিলতেও পারে না। কথা বলবে কি করে? আবার ডাক শুনে ছুটে আসতেও পারে না—তা হলে যে ধরা পড়ে যাবে। তাই সে তাড়াতাড়ি লাড়ু গিলছে আর জল খাচ্ছে; আর যতই গিলতে চাচ্ছে, ততই গলার মধ্যে লাড়ুগুলো আঠার মতো আটকে যাচ্ছে। বিষম খাবার জোগাড় আর কি!
এটা কিন্তু হরিপদর ভারি বদ অভ্যাস! এর জন্য কত ধমক, কত শাসন, কত শাস্তি, কত সাজাই যে সে পেয়েছে, তব তো তার আক্কেল হল না। তব সে লুকিয়ে চুরিয়ে পেটুকের মতো খাবেই। যেমন হরিপদ, তেমনি তার ছোট ভাইটি। এদিকে পেটরোগা, দুদিন অন্তর অসুখ লেগেই আছে, তবু হ্যাংলামি তার যায় না।
সেই যে এক বিষম পেটুকের গল্প শুনেছিলাম—সে একদিন এক বড় নেমন্তন্নের দিনে প্রতিজ্ঞা করেছিল, “আজ আমি নেমন্তন্নে যাব না।” সবাই বললে, “কি ভয়ানক! তুমি এমন ভীষ্মের মতো প্রতিজ্ঞা করছ কেন?” কিন্তু সে কারো কথা শুনল না, ঘরের মধ্যে লেপমুড়ি দিয়ে শুয়ে রইল, আর সকলকে বলে দিল, “ভাই, তোমরা আমার ঘরের বাইরে তালা লাগিয়ে দাও।” পেটুক মশায় ঘরের মধ্যে বন্ধ আছেন, কিন্তু মনটাকে তো আর বন্ধ করে রাখা যায় না—মনটা তার ঘুরে বেড়াচ্ছে সেই নেমন্তন্নের জায়গায়। সে ভাবছে—‘এতক্ষণে বোধ হয় আসন পেতেছে আর পাত পড়েছে—এইবারে বোধ হয় খেতে ডাকছে। কি খেতে দিচ্ছে? লুচি নিশ্চয়ই? লুচি আর বেগুনভাজা দিয়ে গেছে—এবার ডাল, তরকারি, ছক্কা, সব আসছে। তা আসুক, আমি তো আর যাচ্ছি না।—এইবারে কি মাছের কালিয়া?— তারপরে মাংস বুঝি?—তা হোক না—আমি তো আর যাচ্ছি না? মাংসটা না জানি কেমন রেঁধেছে! সেবারে ওদের বাড়ি রান্না অতি চমৎকার হয়েছিল। অবিশ্যি