এখনো সময় আছে—কিন্তু থাকলেই-বা কি? আমি তো যাচ্ছি না। যাক, এতক্ষণে টক দেওয়া হয়েছে—এইবার দই, সন্দেশ, রাবড়ি—আর রসগোল্লাা ঐ যা, ফুরিয়ে গেল তো!” বলেই এক লাফে জানলা টপকে হাঁপাতে হাঁপাতে সে নেমন্তন্নের জায়গায় গিয়ে হাজির!
আমাদের হরিপদর দশাও ঠিক তাই। যেদিন শাস্তিটা একটু শক্ত রকমের হয় তারপর কয়েকদিন ধরে প্রতিজ্ঞা থাকে, “এমন কাজ আর করব না।” যখন অসময়ে অখাদ্য খেয়ে, রাত্রে তার পেট কামড়ায় তখন কাঁদে আর বলে, “আর না—এইবারেই শেষ!” কিন্তু দুদিন না যেতে আবার যেই সেই। তাই সবাই বলে, “কাবু হলেই ‘আর গাব খাব না’, আর তাজা হলেই ‘গাব খাব না তো খাব কি’?” এই তো কিছুদিন আগে পিসিমার ঘরে দই খেতে গিয়ে তারা জব্দ হয়েছিল—কিন্তু তব, তো লজ্জা নেই!
হরিপদর ছোট ভাই শ্যামাপদ এসে বলল, “দাদা, শিগ্গির এসো। পিসিমা এইমাত্র এক হাঁড়ি দই নিয়ে তাঁর খাটের তলায় লুকিয়ে রাখলেন।” দাদাকে এত ব্যস্ত হয়ে এ খবরটা দেবার অর্থ এই যে, পিসিমার ঘরে যে শেকল দেওয়া থাকে, শ্যামাপদ সেটা হাতে নাগাল পায় না – তাই দাদার সাহায্য দরকার হয়। দাদা এসে আস্তে আস্তে শেকলটি খুলে, আগেই তাড়াতাড়ি গিয়ে খাটের তলায় দইয়ের হাঁড়ি থেকে এক খাবলা তুলে নিয়ে, খপ করে মুখে দিয়েছে। মুখে দিয়েই চিৎকার! কথায় বলে “ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছে”, কিন্তু হরিপদর চেচানো তার চাইতেও সাংঘাতিক! চিৎকার শুনে মা, মাসি, দিদি, পিসি, যে যেখানে ছিলেন সব “কি হল, কি হল” বলে দৌড়ে এলেন। শ্যামাপদ বুদ্ধিমান ছেলে, সে দাদার চিৎকারের নমুনা শুনেই এক দৌড়ে ঘোষেদের পাড়ায় গিয়ে হাজির! সেখানে অত্যন্ত ভালোমানুষের মতো তার বন্ধু শান্তি ঘোষের কাছে সে পড়া বুঝিয়ে নিচ্ছে। এদিকে হরিপদর অবস্থা দেখেই পিসিমা বুঝেছেন যে হরিপদ দই ভেবে তাঁর চুনের হাঁড়ি চেখে বসেছে! তারপর হরিপদর যা সাজা! এক সপ্তাহ ধরে সে না পারে চিবোতে, না পারে গিলতে! তার খাওয়া নিয়েই এক মহা হাঙ্গামা কিন্তু তবু, তো তার লজ্জা নেই—আজ আবার লুকিয়ে কোথায় লাড়ু খেতে লেগেছে!
খানিক বাদে মুখখানি ধুয়ে মুছে হরিপদ ভালোমানুষের মতো এসে হাজির! হরিপদর বড়মামা বললেন, “কি রে! এতক্ষণ কোথায় ছিলি?” হরিপদ বলল, “এই তো, উপরে ছিলাম।” “তবে আমরা এত চেঁচাচ্ছিলাম—তুই জবাব দিচ্ছিলি না যে?” হরিপদ মাথা চুলকোতে চুলকোতে বলল, “আজ্ঞে, জল খাচ্ছিলাম কিনা—” “শব্দ জল? না কিছু, স্থলও ছিল?” হরিপদ শুনে হাসতে লাগলো—যেন তার সঙ্গে ভারি একটা রসিকতা করা হয়েছে। এর মধ্যে তার মেজমামা মুখখানা গম্ভীর করে এসে হাজির! তিনি ভেতর থেকে খবর এনেছেন যে হরিপদ একটু আগেই ভাঁড়ার ঘরে ঢুকেছিল, আর তারপর থেকেই প্রায় দশবারোখানা ক্ষীরের লাড়ু কম পড়ছে। তিনি এসেই হরিপদর বড়মামার সঙ্গে খানিকক্ষণ ইংরাজিতে ফিসফাস কি যেন বলাবলি করলেন, তারপর গম্ভীরভাবে বললেন, “বাড়িতে ইদুরের যে রকম উৎপাত, ইঁদুর মারবার একটা বন্দোবস্ত না করলে চলছে না। চারদিকে যে রকম প্লেগ আর ব্যারাম এই পাড়াসুদ্ধ ইঁদুর না মারলে আর রক্ষা নেই।” বড়মামা বললেন, “হ্যাঁ, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে—দিদিকে বলেছি, সেঁকো বিষ দিয়ে লাড়ু