পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/১৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পাঠকের দোকান থেকে হাউই আনলেই হত। বারবার বলেছি—রাজুমামা হাউই চেনে না, তবু তাকেই দেবে হাউই কিনতে।” তারপর সে টেঁপিকে আর ভোলা ময়না আর খুক্‌নুকে, বেশ করে বুঝিয়ে দিল যে, সে যে চেঁচিয়েছিল আর লাফ দিয়েছিল সেটা ভয়ে নয়, হঠাৎ ফুর্তির চোটে।

সন্দেশ—১৩২৯


যতীনের জুতো

 যতীনের নতুন জুতো কিনে এনে তার বাবা বললেন, “এবার যদি অমন করে জুতো নষ্ট কর তবে ঐ ছেঁড়া জুতোই পরে থাকবে।”

 যতীনের চটি লাগে প্রতিমাসে একজোড়া। ধুতি তার দুদিন যেতে না যেতেই ছিঁড়ে যায়। কোন জিনিসে তার যত্ন নেই। বইগুলো সব মলাটছেঁড়া, কোণ দুমড়োনো, স্লেটটা ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত ফাটা। স্লেটের পেনসিলগুলি সর্বদাই তার হাত থেকে পড়ে যায়, কাজেই ছোট-ছোট টুকরো টুকরো। আরেকটা তার মন্দ অভ্যাস ছিল, লেড পেনসিলের গোড়া চিবোনো। চিবিয়ে চিবিয়ে তার পেনসিলের কাঠটা বাদামের খোলার মতো খেয়ে গেছিল। তাই দেখে ক্লাসের মাস্টারমশাই বলতেন, “তুমি কি বাড়িতে ভাত খেতে পাও না?”

 নতুন চটি পায়ে দিয়ে প্রথম দিন যতীন খুব সাবধানে রইল, পাছে ছিঁড়ে যায়। সিঁড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে নামে, চৌকাঠ ডিঙোবার সময় সাবধানে থাকে, যাতে না ঠোক্কর খায়। ঐ পর্যন্তই। দুদিন পরে আবার যেই সেই। চটির মায়া ছেড়ে দুড়দুড় করে সিঁড়ি নামা, যেতে যেতে দশবার হোঁচট খাওয়া, সব আরম্ভ হল। কাজেই একমাস যেতে না যেতে চটির একটা পাশ একটু হাঁ করলো। মা বললেন, “ওরে, এই বেলা মুচি ডেকে সেলাই করা, নাহলে একেবারে যাবে।” কিন্তু মুচি ডাকা হয় না। চটির হাঁও বেড়ে চলে।

 একটা জিনিসের যতীন খুব যত্ন করতো! সেটি হচ্ছে তার ঘুড়ি। যে ঘুড়িটি তার মনে লাগতো সেটিকে সে যত্নে জোড়াতাড়া দিয়ে যতদিন সম্ভব রাখতো। খেলার সময়টা সে প্রায় ঘুড়ি উড়িয়েই কাটিয়ে দিত। এই ঘুড়ির জন্য কতদিন তাকে তাড়া খেতে হতো। ঘুড়ি ছিঁড়ে গেলে সে রান্নাঘরে গিয়ে উৎপাত করতো তার আঠা চাই বলে। ঘুড়ির ল্যাজ লাগাতে কিংবা সুতো কাটতে কাঁচি দরকার হলে সে মায়ের সেলায়ের বাক্স ঘেঁটে ঘণ্ট করে রেখে দিত। ঘুড়ি ওড়াতে আরম্ভ করলে তার খাওয়াদাওয়া মনে থাকতো না। সেদিন যতীন ইস্কুল থেকে বাড়িতে ফিরছে ভয়ে ভয়ে। গাছে চড়তে গিয়ে তার নতুন কাপড়খানা অনেকখানি ছিঁড়ে গেছে। বই রেখে চটি পায়ে দিতে গিয়ে দেখে চটিটা এতো ছিঁড়ে গেছে যে আর পরাই মুস্কিল। কিন্তু সিঁড়ি

নানা গল্প
১৯৯