পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/২০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 গোপাল—“সংস্কৃত।”

 মামা—“সংস্কৃত পড়তে বুঝি আজকাল বই লাগে না? আর অনেকগুলো পাৎলা কাগজ, আঠা আর কাঠি নিয়ে নানারকম কারিকুরি করার দরকার হয়?”

 গোপালের তো চক্ষু স্থির! মামা বলে কি? সে একেবারে হতভম্ব হইয়া হাঁ করিয়া মামার দিকে তাকাইয়া রহিল। মামা বলিলেন—“বই কোথায়?”

 গোপাল বলিল—“তিনতলায়।”

 মামা বই বাহির করিয়া বলিলেন—“এগুলো কি?”

 তাহার পর তাহার কানে ধরিয়া ঘরের এক কোণে বসাইয়া দিলেন। গোপালের ঘুড়ি, লাটাই, সুতো ইত্যাদি সরঞ্জাম আঠারো দিনের জন্য মামার জিম্মায় বন্ধ রহিল।

সন্দেশ–১৩৩০


গল্প

 “বড়মামা, একটা গল্প বল-না।”

 “গল্প? এক ছিল গ, এক ছিল ল আর এক ছিল প—”

 “না—ও গল্পটা না। ওটা বিচ্ছিরি গল্প—একটা বাঘের গল্প বল।”

 “আচ্ছা। যেখানে মস্ত নদী থাকে আর তার ধারে প্রকাণ্ড জঙ্গল থাকে— সেইখানে একটা মস্ত বাঘ ছিল আর ছিল একটা শেয়াল।”

 “না, শেয়াল তো বলতে বলি নি—বাঘের গল্প।”

 “আচ্ছা, বাঘ ছিল, শেয়ালটেয়াল কিচ্ছু ছিল না। একদিন সেই বাঘ করেছে কি একটা ছোট্ট সুন্দর হরিণের ছানার ঘাড়ে হাল্লুম করে কামড়ে ধরেছে—”

 “না—সেরকম গল্প আমার শুনতে ভালো লাগে ন। একটা ভালো গল্প বল।”

 “ভালো গল্প কোথায় পাব? আচ্ছা শোন—এক ছিল মোটা বাবু আর এক ছিল রোগা বাবু। মোটা বাবু কিনা মোটা, তাই তার নাম বিশ্বম্ভর, আর রোগা বাবু কিনা রোগা, তাই তার নাম কানাই।”

 “বিস-কম্বল মানে কি মোটা, আর কানাই মানে রোগা?”

 “না; মোটা কিনা, তাই তার মস্ত মোটা নাম—বিশ্-শম্-ভর্। আর রোগা লোকের নাম কানাই।”

 “রোগা কানাই বলল, ‘মোটা বিশ্বম্ভর, তোমার এমন বিচ্ছিরি ঢাকাই জালার মতন চেহারা কেন?’ মোটা বিশ্বম্ভর বলল, ‘রোগা কানাই, তোর হাত-পা কেন কাঠির মতন, হাড়গিল্লের ঠ্যাঙের মতন, রোদে শুকনো দড়ির মতন?’ তখন তারা

নানা গল্প
১৯৫