বলল, “ব্যা—”। উকিল বলল, “খবরদার!—বল, নিয়েছিলে কি না।” চাষা বলল, “ব্যা—” উকিল বলল, “হুজুর! আসামীর বেয়াদবি দেখুন।” হাকিম রেগে বললেন, “ফের যদি অম্নি করিস, তোকে আমি ফাটক দেব।” চাষা অত্যন্ত ভয় পেয়ে, কাঁদ কাঁদ হয়ে বলল, “ব্যা-ব্যা—” হাকিম বললেন, “লোকটা পাগল নাকি?”
তখন চাষার উকিল উঠে বলল, “হুজুর, ওকি আজকের পাগল—ও বহুকালের পাগল, জন্মে অবধি পাগল। ওর কি কোন বুদ্ধি আছে, না কাণ্ডজ্ঞান আছে? ও আবার কর্জ নেবে কি! ও কি কখনো খত লিখতে পারে নাকি? আর পাগলের খত লিখলেই বা কি? দেখুন দেখি, এই হতভাগা মহাজনটার কাণ্ড দেখুনে তো! ইচ্ছে করে, জেনেশুনে, পাগলটাকে ঠকিয়ে নেবার মৎলব করেছে। আরে, ওর কি আর মাথার ঠিক আছে? এরা বলেছে, ‘এইখানে একটা আঙুলের টিপ দে’—পাগল কি জানে, সে অমনি টিপ দিয়েছে। এই তো ব্যাপার!”
দুই উকিলে ঝগড়া বেধে গেল। হাকিম খানিক শুনেটুনে বললেন, “মোকদ্দমা ডিসমিস।” মহাজনের তো চক্ষুস্থির। সে আদালতের বাইরে এসে চাষাকে বলল, “আচ্ছা, নাহয় তোর চারশো টাকা ছেড়েই দিলাম—ঐ একশো টাকাই দে।” চাষা বলল, “ব্যা—।” মহাজন যতই বলে, যতই বোঝায়, চাষা তার পাঠার বুলি কিছুতেই ছাড়ে না। মহাজন রেগেমেগে বলে গেল, “দেখে নেব, আমার টাকা তুই কেমন করে হজম করিস!”
চাষা তার পোঁটলা নিয়ে গ্রামে ফিরতে চলেছে, এমন সময়ে তার উকিল এসে ধরলো, “যাচ্ছ কোথায় বাপু? আমার পাওনাটা আগে চুকিয়ে দিয়ে যাও। একশো টাকায় যে রফা হয়েছিল, এখন মোকদ্দমা তো জিতিয়ে দিলাম।” চাষা অবাক হয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, “ব্যা—।” উকিল বলল, “বাপুহে, ও-সব চালাকি খাটবে না—টাকাটি এখন বের কর।” চাষা বোকার মতন মুখ করে আবার বলল, “ব্যা—।” উকিল তাকে নরমগরম অনেক কথাই শোনালো, কিন্তু চাষার মুখে কেবলই ঐ এক জবাব! তখন উকিল বলল, “হতভাগা, গোমুখ্যু, পাড়াগেঁয়ে ভূত—তোর পেটে এতো শয়তানি কে জানে! আগে যদি জানতাম তা হলে পোঁটলাসুদ্ধ টাকাগুলো আটকে রাখতাম।”
বুদ্ধিমান উকিলের আর দক্ষিণা পাওয়া হল না।
গোরুর বুদ্ধি
পণ্ডিতমশাই ভট্চাজ্জি বামুন, সাদাসিধে, শান্তশিষ্ট, নিরীহ মানুষ। বাড়িতে তাঁর সরষের তেলের দরকার পড়েছে, তাই তিনি কলুর বাড়ি গেছেন তেল কিনতে।
কলুর ঘরে মস্ত ঘানি, একটা গোরু গম্ভীর হয়ে সেই ঘানি ঠেলছে, তার গলায় ঘণ্টা বাঁধা। গোরুটা চলছে চলছে আর ঘানিটা ঘুরছে, আর সরষে পিষে তা থেকে তেল বেরোচ্ছে। আর গলার ঘণ্টাটা টুংটাং টুংটাং করে বাজছে।