পণ্ডিতমশাই ভাবলেন, ‘তাও তো বটে। মূর্খ গোরুটা ন্যায়শাস্ত্র পড়ে নি, তাই কলুর কাছে সে জব্দ আছে।’
ঠকানে প্রশ্ন
গণেশদাদা বললেন, “একটা গোরুর গলায় দশ হাত লম্বা মোটা দড়ি বাঁধা। সেখান থেকে পঁচিশ হাত দূরে এক আঁটি ঘাস আছে। কেউ ঘাস এগিয়ে দিল না, দড়ি ছিঁড়তে হল না, অথচ গোরু অনায়াসে সেই ঘাস খেয়ে ফেলল। বল তো এটা কি করে সম্ভব হয়?” দামু বলল, “বুঝেছি। খুব হাওয়া হল আর ঘাস উড়ে এসে পড়ল।” গণেশদা বললেন, “তা হলেই তো এগিয়ে দেওয়া হল।” গদাই অনেক ভেবে বলল, “এরকম হতেই পারে না।” গণেশদা বললেন, “কেন হবে না? গোরুর গলায় দড়ি বাঁধা বলেছি, দড়িটা যে খোঁটায় বাঁধা তা তো আর বলি নি—দড়িটা আলগাই ছিল।” তা শুনে সকলে বলল, “এটা নেহাৎ ফাঁকি হল।”
তখন মতিলাল বলল, “দুটো গাধা ছিল—তাদের ভয়ানক জেদ। খাওয়াবার সময় একটা পশ্চিমমুখো আর একটা পূবমুখো হয়ে দাঁড়িয়ে রইল—ঠেললে সরবে না, মারলে নড়বে না। এখন একটা বালতিতে করে দুটোকে এক সঙ্গে খড় খাওয়াতে হবে। কি করা যায়? করা যা হল তা কিছুই কঠিন নয়, অথচ গাধাদুটো যেমন উল্টোদিকে মুখ করেছিল। ঠিক তেমনিই রইলো। দামু বলল, “ওটা আমি জানি।” আর সবাই বলল, “জানিস তো চুপ করে থাক না। আমাদের ভাবতে দে।” তারা ভাবছে, সেই সঙ্গে তোমরাও একটা ভেবে নেও।
যা হোক, এটাতে সকলকে ঠকানো গেল না। তখন বিপিন বলল, “আমি একটা কৌশলের ধাঁধা জানি। এক সুলতান, আটহাত লম্বা, আটহাত চৌড়া একখানা শতরঞ্চি বিছিয়ে, তার ওপরে ঠিক মধ্যখানে একটা হীরের কৌটো রেখে বললেন, ‘ঐ শতরঞ্চিতে না মাড়িয়ে কিংবা তার ওপরে হাত, পা বা শরীরের কোনরকম ভর না দিয়ে, আর লাঠি, দড়ি বা কোন যন্ত্রের বা অন্য লোকের সাহায্য না নিয়ে, যে পারো সে কৌটোটিকে উঠিয়ে নেও।’ কত ওস্তাদ ডন্গীর এসে কতরকম কসরৎ করে নেবার চেষ্টা করল, কত ঢ্যাঙা ঢ্যাঙা লোক এসে কতরকম কায়দা করে, ঝুঁকে পড়ে, সেটাকে তুলবার চেষ্টা করল, কিন্তু কেউ পারল না। শেষটায় একটা বেঁটে, রোগা লোক এসে চটপট অতি সহজে কৌটোটাকে উঠিয়ে নিয়ে সকলকে বোকা বানিয়ে দিল। বল তো কিরকম করে হল?’
গোপালমামা এতক্ষণ চুপ করে শনছিলেন। তিনি হঠাৎ বলে উঠলেন, “ভারি তো বললি! এই যে শরবতের গেলাস দেখছিস এটাকে ধামাচাপা দিয়ে রাখ; আমি ধামায় হাত দেব না, তুলব না, অথচ শরবৎ খেয়ে ফেলব।” তখন সকলে ছুটোছুটি করে একটা ধামা এনে গেলাসটাকে চাপা দিয়ে তামাশা দেখতে বসল। মামা তখন