পাতা:সুকুমার রায় রচনাবলী-প্রথম খণ্ড.djvu/২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এ-সমস্ত চলবে না কো,
আমি আবার এইছি ঘুরে,
তান ধরেছি সাবেক সুরে,
মংগলবার আমার বাসায়,—
আর থেকো না ভোজের আশায়—
শুনবে এসো সুপ্রবন্ধ
গিরিজার বিবেকানন্দ।

 প্রথমে ননসেন্স ক্লাব ও পরে মন-ডে ক্লাবের জন্য সুকুমার যে-সব প্রবন্ধ, কবিতা, নাটক ইত্যাদি লিখেছিলেন তার অনেকগুলিই তাঁর জীবনকালে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় বেরিয়েছিল। পরে কিছু কিছু, এম. সি. সরকার এণ্ড কোং ও সিগনেট প্রেস ছাপান।

 মন-ডে ক্লাবের অভিনয়ের মধ্যে ছিল শ্যারাড বা নাট্যাকারে লুকোনো শব্দের ধাঁধা। এগুলি লিখে রাখলে সভাসমিতিতে মজা করবার উপযুক্ত সাহিত্য হয়ে থাকতো। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় যে, রবীন্দ্রনাথের ‘হাস্যকৌতুক’ ও ‘ব্যঙ্গকৌতুকের’ মধ্যে শ্যারাড আছে।

 কবির জন্মতিথিতে সুকুমার শান্তিনিকেতনে যেতেন। এ-সম্বন্ধে কতকগুলি খবর শ্রীমতী সীতাদেবীর ‘পুণ্যস্মৃতি’তে পাওয়া যায়। ১৯১১ সালে তিনি ‘অদ্ভুত রামায়ণ’ (লক্ষ্মণের শক্তিশেল) থেকে ‘ঐ আসে, ঐ আসে—’ গানটি গেয়েছিলেন। ওটি এত জনপ্রিয় হয়েছিল যে তাঁর নামই হয়ে গেছিল ‘ঐ আসে!’

 ১৯১৭ সালে তিনি শান্তিনিকেতনে সস্ত্রীক গিয়ে তিন-চারদিন থেকেছিলেন। তখন ‘অদ্ভুত রামায়ণে’র গান এবং অন্য কয়েকটি হাসির গান ও কবিতা আর ‘শ্রীশ্রীশব্দকল্পদ্রুম’ পড়ে শুনিয়েছিলেন আর কয়েকটি শ্যারাডের অভিনয় করিয়েছিলেন।

 এইবার একটি ‘বাঙালসভা’র আয়োজন হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন, তিনি প্রস্তাব করেছিলেন যে শ্রীমতী সুপ্রভাকে সভানেত্রী করা হোক, কিন্তু তিনি রাজি না হওয়াতে সুকুমার সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতি হয়েছিলেন, কিন্তু জন্মাবধি কলকাতাবাসী হয়ে বাঙাল ভাষায় কথা বলার ক্ষমতা ভালোভাবে আয়ত্ত ছিল না বলে তাঁর ভাষণটি পুরোপুরি বাঙাল ভাষায় দিতে পারেন নি।

 এই সময়ে ভারতীয় চিত্রকলার পুনরভ্যুত্থান প্রবাসী ও মডার্ণ রিভিউ পত্রিকা এই নবজাগরণের প্রবক্তার স্থান নিয়েছিল এবং ওই দুটি কাগজে অবনীন্দ্রনাথ, নন্দলাল ও তাদের শিষ্যদের অনেক ছবি ছাপা হচ্ছিল। এই প্রসঙ্গে বিমলাংশুপ্রকাশ রায়চৌধুরীর এক প্রবন্ধকে অবলম্বন করে একটি তর্কযুদ্ধ হয়েছিল। তার সর্বশেষ প্রবন্ধটি ছিল সুকুমারের।

 ১৯২১ সালে তাঁর বহুপ্রার্থিত একমাত্র সন্তান, সত্যজিতের জন্ম হলো। তারপরই তিনি কালাজ্বরে আক্রান্ত হলেন। গ্রামের জমিদারী দেখতে গিয়ে রোগ নিয়ে এলেন এবং পিতার মতো তিনি এমন রোগে গেলেন যাতে আজ আর কেউ মরে না।

 দীর্ঘ আড়াই বছর তিনি রোগশয্যায় ছিলেন। এই সময়ে তাঁর ঘরটি ছিল সন্দেশের প্রাণকেন্দ্র, বাংলার শিশুসাহিত্যতীর্থ। কখনো মোটা তাকিয়ায় ভর দিয়ে

সু.স.র-৩
১৭