না পেয়ে বিরক্ত হয়ে চলে গেছে। পরদিন সকালে আবার তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঠাণ্ডা করি।”
ডাক্তারের গল্প শুনে ইনসপেকটরবাবু বললেন, “আপনার তো মশাই অল্পের ওপর দিয়ে গেল, আমার ঐরকম একটা ভুলের দরুন চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়েছিল। সেও বহুদিনের কথা, তখন আমি সবেমাত্র পুলিসের চাকরি নিয়েছি। ঘোষপুরের বাজার নিয়ে সে সময়ে সুদাস মণ্ডলের সঙ্গে রায়বাবুদের খুব ঝগড়া চলছে। একদিন বিকেলে খবর পাওয়া গেল, আজ সন্ধ্যার পর সুদাস লাঠিয়াল নিয়ে বাজার দখল করতে আসবে। ইনসপেকটর যোগীনবাবর হুকুমে আমি ছয়জন কনসটেবল নিয়ে সন্ধ্যার কাছাকাছি ঘোষপুরে গিয়ে উপস্থিত হলাম। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না; সন্ধ্যার একটা পরেই দেখলাম নদীর দিক থেকে কিসের আলো আসছে। মনে হচ্ছে কারা যেন কাঁঠালতলায় বসে বিশ্রাম করছে। ব্যাপার কি দেখবার জন্য আমি খুব সাবধানে একটা ঝোপের আড়াল পর্যন্ত এগিয়ে গেলাম। গিয়ে দেখি একটা মশালের ঝাপসা আলোয় লাঠি হাতে কয়েকটা লোক বসে আছে, আর একটা পালকির আড়ালে দুজন লোক কথাবার্তা বলছে। কান পেতে শুনলাম একজন বলল, ‘সুদাসদা, কতদূর এলাম? উত্তর হলো, ‘এই তো ঘোষপুরের বাজার দেখা যাচ্ছে।’ অমনি আর কথা নেই! আমি জোরে শিস দিতেই সঙ্গের পুলিশগুলো মারমার করে তেড়ে এসেছে। পলিশের সাড়া পাবামাত্র সুদাসের লোকগুলো ‘বাপরেমারে’ করে কে যে কোথায় সরে পড়ল তা আর ধরতেই পারা গেল না। কিন্তু পালকির কাছে যে দুটো লোক ছিল, তারা খুব সহজেই ধরা পড়ে গেল। তাদের একজনের বয়স অল্প, চেহারাটা গোঁয়ারগোবিন্দ গোছের—বুঝলাম এইই সদাস মণ্ডল। সে আমায় তেড়ে কি যেন বলতে উঠেছিল, আমি এক ধমক লাগিয়ে বললাম, ‘হাতে হাতে ধরা পড়েছ বাপু। এখন রোখ করে কোন লাভ নেই, কিছু বলবার থাকে তো থানায় গিয়ে বোলো।’ শুনে তার সঙ্গের বুড়ো লোকটা ভেউ ভেউ করে কেঁদে উঠে খানিকক্ষণ অনর্গ'ল কি যে বকে গেল আমি তার কিছুই বুঝলাম না, খালি বুঝলাম যে সে আমাকে তার ‘সুদাসদার’ পরিচয় বোঝাচ্ছে। আমি বললাম, ‘অত পরিচয় শুনবার আমার দরকার নেই, আসল পরিচয়টা আজ ভালোরকমই পেয়েছি।’ তারপর তাদের হাতকড়া পরিয়ে মহা ফুর্তিতে তো থানায় এনে হাজির করা গেল। তারপর মশাই, যা কাণ্ড! হেড ইনসপেকটর যতীনবাবু রাগে আগুনের মতো লাল হয়ে, টেবিল থাবড়ে, দোয়াত উল্টে, কাগজ কলম ছুঁড়ে আমায় খুব সহজেই বুঝিয়ে দিলেন যে আমি একটি আস্ত রকমের হস্তীমূর্খ ও অর্বাচীন পাঁঠা। যে লোকটিকে ধরে এনেছি সে মোটেও সুদাস মণ্ডল নয়। তার নাম সুবাসচন্দ্র বোস; সে যতীনবাবুর জামাই, সঙ্গের লোকটি তার ঠাকুরদার আমলের চাকর; যতীনবাবরে কাছেই তারা আসছিল। আমার বুদ্ধিটা হাঁ-করা বোয়ালমাছের মতো না হলে আমি সুবাস শুনতে কখনই সুদাস শুনতাম না—ইত্যাদি। অনেক কষ্টে, অনেক খোসামুদি করে অনেক হাতে-পায়ে ধরে, সে যাত্রায় চাকরিটা বজায় রাখতে হয়েছিল।”
ইনস্পেকটরের গল্প শেষ হতেই বৃন্দাবনচন্দ্র টিকি দুলিয়ে বললেন, “আপনাদের গল্প শুনে আমারও একটা গল্প মনে পড়ে গেল। সেও ঐরকম ‘উদোর-বোঝা-বুদোর-ঘাড়ে’ গোছের গল্প। তবে ভুলটা আমি নিজে করি নি, করেছিল আমার ভাইপো—সেই যে ছোকরাটি এখন মেডিকেল কলেজে পড়ে। একদিন