পণ্ডিত ছিলেন। একদিকে যেমন ব্রাহ্মণপণ্ডিতেরা শাস্ত্রবিচারে তাঁকে মধ্যস্থ মানতেন, অন্যদিকে মৌলবিরাও ফরমানের অর্থ বোঝার জন্য তাঁর কাছে আসতেন। আসল নাম কালীনাথ হলেও মুন্সী শ্যামসুন্দর বলেই তিনি লোকের কাছে পরিচিত ছিলেন৷
শ্যামসুন্দর মুন্সীর আটটি ছেলেমেয়ে—পাঁচ পুত্র, তিন কন্যা। মেয়েরা হলেন গিরিবালা, ঘোড়শী ও মৃণালিনী। ছেলেদের মধ্যে দ্বিতীয় কামদারঞ্জনকে দূরসম্পর্কের কাকা হরিকিশোর রায়চৌধুরী দত্তক নিয়ে নাম বদলে উপেন্দ্রকিশোর রেখেছিলেন। প্রথম সারদারঞ্জন অঙ্ক ও সংস্কৃতে স্বনামধন্য পণ্ডিত, মেট্রোপলিটন (বিদ্যাসাগর) কলেজের অধ্যক্ষ ও প্রসিদ্ধ ক্রিকেটর, ‘ভারতের ডব্লু. জি. গ্রেস’ নামে খ্যাত ছিলেন। তৃতীয় মুক্তিদারঞ্জন ওই কলেজের অধ্যাপক ও ক্রিকেট খেলোয়াড় ছিলেন। চতুর্থ কুলদারঞ্জন ছিলেন শিশুসাহিত্যিক ও নামকরা ‘ফোটো-আর্টিস্ট’-তিনি আলোকচিত্রের ছবি বড় করে ‘পোট্রেট’ তৈরি করতেন। তখনকার বাংলাদেশে এমন সভ্রান্ত ঘর প্রায় ছিল না যেখানে কুলদারঞ্জনের তৈরি করা প্রিয়জনের ছবি শোভা পেতো না। ইনিও ভালো ক্রিকেট খেলতেন। আর ভালো ক্রিকেট খেলতেন ছোটভাই প্রমদারঞ্জন, তিনি ভারত সরকারের বনবিভাগের একজন আধিকারিকের পদে তখনকার শ্যাম ও বর্মাসমেত ভারতের নানা দুর্গম অঞ্চলে কাজ করতেন। তাঁর ভ্রমণের কথা ‘বনের খবর’ ধারাবাহিকভাবে সন্দেশের পাতায় বেরোতো এবং পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়৷
উপেন্দ্রকিশোরের ছেলেমেয়েদের প্রত্যেকেই অল্পবিস্তর প্রতিভার উত্তরাধিকারী হয়েছিলেন। সুকুমারের প্রভাতসূর্যের জ্যোতির পাশে শুকতারার মতো ছিলেন তাঁর দিদি স্বনামধন্যা লেখিকা ও চিত্রকারিণী সুখলতা। সেই সময়ে প্রকাশিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘রাজর্ষি’র অনুসরণে ভাইবোনের ডাকনাম হয়েছিল হাসি ও তাতা। অন্য দুই বোন পণ্যলতা ও শান্তিলতারও লেখার ক্ষমতা ছিল। মাত্র উনত্রিশ বছর বয়সে মারা গেলেও সন্দেশের পাতায় শান্তিলতার উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল। পুণ্যলতাও সন্দেশে লিখতেন আর তারপর, ‘ছেলেবেলার দিনগুলি’তে যে সাহিত্যিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, পরবর্তী সময়ে চোখের দুর্বলতার জন্য তা পূর্ণভাবে রক্ষা করতে না পারলেও আজকের সন্দেশে তাঁর ছোট্টদের জন্য লেখা ছোট্ট কথিকাগুলি যে প্রতিভাসিঞ্চিত তাতে সন্দেহ নেই। তাঁর কন্যা নলিনী দাশের লেখা আজকালকার সন্দেশের পাঠক-পাঠিকার কাছে সুপরিচিত।
মেজভাই সুবিনয় শিশুসাহিত্যে খ্যাতি পেয়েছিলেন এবং উপেন্দ্রকিশোর ও সুকুমারের অকালমৃত্যুর পর রুগ্ণ শরীরে বহু ঝড়ঝঞ্জার মধ্য দিয়ে ‘সন্দেশে’র হাল ধরেছিলেন। ছোটভাই সুবিমল সন্দেশে লিখতেন, তাঁর রচনায় যে অদ্ভুত রসের পরিচয় পাওয়া যেত নানা বিপর্যয়ের প্রতিকূলতায় তার পূর্ণবিকাশ হতে পারে নি৷
প্রমদারঞ্জনের দ্বিতীয়া কন্যা লীলা মজুমদারের অনবদ্য শিশুসাহিত্য-সৃষ্টি এই প্রতিভারই ধারাবাহী৷
উপেন্দ্রকিশোরের ছোটবোনের বিয়ে হয়েছিল তখনকার নামকরা সৌগন্ধিক, আনন্দমোহন বসুর ভাইপো হেমেন্দ্রমোহন বসুর (এইচ. বসু) সঙ্গে। তাঁর জ্যেষ্ঠা কন্যা মালতী ঘোষাল গানে আর ছেলেদের মধ্যে ‘কার্তিক, গণেশ’ ক্রিকেট খেলায় মাতুলবংশের ঐতিহ্য রেখেছিলেন। তৃতীয় পুত্র নীতীন বসু ছায়াছবির জগতে