কিনা! তারপর যখন সে দেখল ঝাঁট দেওয়াও ঠিক হয়েছে, খাবারও রান্না হয়েছে, ধানও বাছা হয়েছে, তখন সে রেগে চিৎকার করে বলতে লাগল, “হতভাগি মেয়ে, কে তোকে বাঁচিয়েছে—শিগ্গির আমায় বল্।” ওয়াসিলিসা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল, “আমার মা মারা যাবার সময় আমায় আশীর্বাদ করেছিলেন, তাতেই আমি বেঁচেছি।” এই না শুনে ডাইনিবুড়ি ভয়ে চিৎকার করে বলতে লাগল, “ওরে বাবারে! কার আশীর্বাদ নিয়ে আমার বাড়ি এসেছ রে! আমার সর্বনাশ করবে যে! এই নে তোর আগুন নে—আমার বাড়ি থেকে শিগ্গির বেরো।” এই বলে সে ওয়াসিলিসাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিল, আর একটি মড়ার খুলি তাকে ছুঁড়ে দিল।
ওয়াসিলিসা একটা লাঠির আগায় খুলিটাকে চড়িয়ে বাড়ি নিয়ে গেল। কিন্তু বাড়িতে নিলে কি হবে? তার যে সেই সৎমা আর তার দুটো দুষ্টু মেয়ে, তাদের তো কেউ কোনদিন আশীর্বাদ করেনি—তারা মহা খুশি হয়ে যেই আগুনটা নিতে গিয়েছে অমনি তাদের গায়ে আগুন ধরে গিয়ে তারা তো মরলই, বাড়িঘর সব পুড়ে ছাই হয়ে গেল।
ওয়াসিলিসা আবার বসে কাঁদতে লাগল। তখন কাঠের পুতুলের কথা মনে হল। পুতুলের মুখে খাবার দিয়ে বলল, “কাঠের পুতুল, খাবার খাও, আবার তুমি জ্যান্ত হও, আমার সঙ্গে কথা কও।” কাঠের পুতুল জেগে উঠে বলল, “কাঠের পুতুল সঙ্গে রয়, ওয়াসিলিসার কিসের ভয়? তুমি রাজার কাছে যাও তিনি তোমায় সুখী করবেন।”
ওয়াসিলিসা তখন রাজার বাড়ি চলল। এমন সুন্দর মেয়ে, এমন মিষ্টি কথা বলে, কেউ তাঁকে বারণ করল না, কেউ বাধা দিল না। ওয়াসিলিসা একেবারে রাজসভায় রাজার সামনে গিয়ে উপস্থিত।
রাজা এমন চমৎকার মেয়ে কখনো কোথাও দেখেন নি—তিনি তার কথা শুনবেন কি—তাড়াতাড়ি সিংহাসন থেকে উঠে পড়লেন, বললেন, “আহা কি সুন্দর মেয়েটি গো! তুমি কার মেয়ে? কি তোমার দুঃখ? তুমি আমায় বিয়ে কর—আমার রাজ্যের রানী হয়ে থাক—আমি তোমার সব দুঃখ দূর করব।”
এমনি করে ওয়াসিলিসা রানী হলেন—আর সেই কাঠের পুতুল সোনার খাটে মখমলের গদিতে, রেশমের চাদরের উপর ঝক্ঝকে পোশাক পরে শুয়ে থাকত।