অনেকদিন পথপ্রদর্শক ও শ্রেষ্ঠ পরিচালকের স্থান অধিকার করেছিলেন৷
সুকুমার রায়ের একমাত্র পুত্র সত্যজিতের খ্যাতি ভারত ছাড়িয়ে বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে৷
পরিবার-পরিবেশ: সুকুমার রায় এই পরিবারের যে অদ্ভুত শাখায় জন্ম নিয়েছিলেন তার শীর্ষে ছিলেন বহুমুখী প্রতিভাশালী উপেন্দ্রকিশোের। এঁর সংসারের কথা উপলব্ধি করতে পারলে তবেই বুঝতে পারা যায় যে এত অল্প বয়সে সুকুমারের সত্তার এত পরিপূর্ণ বিকাশ কি করে সম্ভব হয়েছিল। উপেন্দ্রকিশোরের কর্ম ও মননধারাকে প্রায় সর্বত্রগামী বলে বর্ণনা করা যায়। তিনি একাধারে বিজ্ঞানী, শিল্পী, সাহিত্যিক ও সংগীতকলানিপুণ ছিলেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর ভারতীয় নবজাগরণের অন্যান্য মহাজনদের মতো তিনি নিজ ক্ষেত্রে এক হাতে সৃষ্টি ও রক্ষার সামগ্রিক প্রয়াস করেছিলেন। ছোটদের জন্য লিখেছিলেন, এঁকেছিলেন এবং অযোগ্য মেশিনের স্থূলতায় সুন্দর সৃষ্টিকে বিকৃত হতে দেখে ছবিতোলা ও ছাপার জগতে দেশ-বিদেশে নতুন অধ্যায় যোজনা করেছিলেন। ছবি-গান-গল্প-কবিতা-প্রবন্ধরম্যরচনা প্রভৃতি দিয়ে যে অনবদ্য শিশুজগৎ তিনি রচনা করেছিলেন তারই পূর্বনীড় ছিল তাঁর সংসার৷
এই সংসারে কোনো খিল ছিল না, ছোট বড় সবাই মিলে খেলাধুলো, আমোদপ্রমোদ, পড়ালেখা, ছবি-আঁকা, গানবাজনার মধ্যে যে অখণ্ড সঙগ স্থাপিত হয়েছিল তার পূর্ণপাত্র উপচে উঠে পরিবারের অন্যান্য শাখাকে অভিষিক্ত করে গোটা সমাজটাকেই সিঞ্চিত করেছিল৷
উপেন্দ্রকিশোর ব্রহ্মনিষ্ঠ গৃহস্থ ছিলেন। মৈমনসিংহের জিলাস্কুলে পড়বার সময়ে তিনি সহপাঠী ব্রাহ্মভাবাপন্ন গগনচন্দ্র হোমের সঙ্গে মিশতে আরম্ভ করেন। পরে, ১৮৮০ বা ১৮৮১ সালে কলকাতায় কলেজে পড়তে এসে ব্রাহ্মসমাজের প্রতি আরো বেশি আকৃষ্ট হন এবং ক্রমশ ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করেন৷
তেইশ বছর বয়সে তিনি ব্রাহ্মসমাজের নেতা, প্রসিদ্ধ সমাজসংস্কারক ও তেজস্বী দেশসেবক দ্বারকানাথ গাংগুলির মেয়ে বিধুমুখীকে বিয়ে করেন। জাতধর্মের বেড়াভাঙা এই বিয়েতে আত্মীয়স্বজনেরা হয়তো প্রথমটা অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারিবারিক স্নেহবন্ধনেরই জয় হয়েছিল৷
বিয়ের কিছুদিন পর উপেন্দ্রকিশোর বিধুমুখীকে নিয়ে ১৩ নম্বর কর্ণওয়ালিস স্ট্রিটে লাহাদের প্রকাণ্ড লাল বাড়ির কয়েকটা ঘর ভাড়া করে সংসার পাতেন। এই বাড়িতে আরো কয়েকটি ব্রাহ্ম পরিবার ছিলেন। শ্বশুরমশাই দ্বারকানাথ গাংগুলি ও তাঁর দ্বিতীয়পক্ষের স্ত্রী স্বনামধন্যা কাদম্বিনী গাংগুলিও এই বাড়িতেই থাকতেন। তাছাড়া, এখানে ব্রাহ্মবালিকা শিক্ষালয় ও তার বোডিং ছিল এবং এই বাড়ির ছাতে প্রতি বৎসর ভাদ্রোৎসব ও মাঘোৎসবের সময়ে বালক-বালিকা সম্মেলন হতো৷
উপেন্দ্রকিশোরের ছয় ছেলেমেয়ের মধ্যে পাঁচটি এখানে জন্মেছিলেন আর এসেছিলেন সুরমা ভট্টাচার্য। এর মায়ের মৃত্যুর পর বাবা রামকুমার বিদ্যারত্ন তাঁর তিন মেয়েকে বন্ধুবান্ধবদের বাড়িতে রেখে সন্ন্যাসী হয়ে যান ও রামানন্দস্বামী নাম নেন। সেই থেকে নামে মাসি ‘সুরমা মাসি’ বাড়ির মেয়ের মতো বড় হয়েছিলেন ও