তেমন বাক্স হলে হবে না; আজ রাত্রের শেষে স্বর্গের দূত এসে আমায় নিয়ে যাবে। আবার যে-সে দিন হবে না—এমনি তিথি, এমনি বার, এমনি মাস, এমনি নক্ষত্র সব মেলা চাই—এরকম সুযোগ হাজার বছরে একদিন হয়।” সওদাগর বলল, “ভাই আমি বুড়ো হয়েছি, কবে মরে যাই তার তো ঠিক নেই—আমার টাকাকড়ি ঘরবাড়ি সব তোমায় লিখে দিচ্ছি। তুমি আমায় ও বাক্সটা দাও—আমি স্বর্গে যাই।” পিটার বলল, “খবরদার, আমি ছেলেমানুষ বলে আমায় টাকার লোভ দেখিও না।” বুড়ো কাঁদতে লাগল; অনেক মিনতি করে বলতে লাগল, “এই বুড়ো বয়সে তীর্থ ঘুরে কতটুকু আর পুণ্য হবে—এখন না হলে আর আমার স্বর্গে যাবার আশা নেই।” তখন পিটার রাজি হল।
বাক্স খুলে বুড়ো তার মধ্যে ঢুকল, পিটার তার কাছ থেকে বিষয় সম্পত্তি লিখিয়ে নিয়ে বাক্সটা আবার দড়ি দিয়ে বেঁধে দিল। যাবার সময় বলে গেল, “রাত্রের শেষে স্বর্গের দূত আসবে, তখন কিন্তু টুঁ শব্দটি করবে না। তা হলেই আর স্বর্গে যাওয়া হবে না।”
রাত্রে রাজামশাই শান্ত্রী নিয়ে বাক্সটা নেড়েচেড়ে সমুদ্রে ফেলে দিলেন। রাজা ভাবলেন, ‘আপদ গেল।’ দুদিন বাদে রাজা বেড়াতে বেরিয়েছেন—এমন সময় পাজি পিটার জমকালো পোশাক পরে ধব্ধবে সাদা ঘোড়ায় চড়ে এসে সেলাম করে বলল, “মহারাজ আমায় সমুদ্রে ফেলে বড়ই উপকার করেছেন। আহা! সমুদ্রের তলায় যে দেশ আছে—সে বড় চমৎকার জায়গা। আর লোকেরা যে কি ভালো, তা আর কি বলব—আমায় কি ছাড়তে চায়? আসবার সময় থলে ভরা কেবল হীরে মণি মুক্তো সঙ্গে দিল।” এই বলেই সে চম্পট দিল।
রাজামশাই হাঁ করে রইলেন। রাজামশাই জানতে চান সমুদ্রের তলাটার কথা! পাজি পিটার যা বলেছে তা সত্যি কিনা—তা হলে তিনি একবার দেখে আসেন।
শ্বেতপুরীর রাজা আর লালপুরীর রাজা, দুজনের যেমন পাশাপাশি বাড়ি, তেমনি গলাগলি ভাব। শ্বেতপুরী বলে, “আমার ছেলে যখন বড় হবে, তখন তোমার মেয়ের সঙ্গে তার বিয়ে দেব।” লালপুরী বলে, “আমার মেয়ের যখন বয়স হবে, তখন তোমার ছেলেকে আমার জামাই করব।” আর দুজনেই বলে, “আহা, রানীরা যদি বেঁচে থাকতেন!”
এমনি করে দিন কেটে যায়। হঠাৎ একদিন কোত্থেকে এক শিকারি এসে রাজপুরীতে অতিথি হল। সে বলে এমন দেশ নেই যা সে দেখে নি। সেই সোনার দেশের কাজলি নদী, তার ওপারে রক্তমুখো অসভ্যেরা থাকে, সেখানে সে হরিণ