ছাড়া আর কোন জল খাবে না। কোন গাছের ফল ছিঁড়বে না, ফল পাড়বে না—তা হলেই তোমাদের কোন বিপদের ভয় নেই।”
ভোরবেলা দুজনে একটি বনরেশমের কবল আর পুঁটলি ভরে খাবার সঙ্গে নিয়ে রওনা হল। দুপরেবেলা তারা শ্রান্ত হয়ে নদীর ধারে জল খেতে গেছে। তখন কোথা থেকে এক শিকারি এসে হাজির। সে বলল, “আরে ছি, ছি, ঐ নোংরা জল কি খেতে আছে? এই নাও, বরফ দেওয়া ঠাণ্ডা জল।” তারা বলল, “না, নদীর জল ছাড়া আর কোন জল আমরা খাব না।” শিকারি রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেল।
রাত্রি হলে শুখনো ঘাসের ওপর কম্বল পেতে দুজনে ঘুমিয়ে রইলো; পরের দিন ভোর না হতে আবার উঠে রওনা হল। সেদিনও যেই তারা নদীর ধারে খেতে বসেছে, অমনি এক শিকারি এসে তাদের বলছে, “আরে, ও-সব বাসি পিঠে খাচ্ছ কেন? চমৎকার ফল রয়েছে, যত ইচ্ছা পেড়ে পেড়ে খাও।” তারা বলল, “না, আমরা বনের ফল ছিঁড়ব না, বনের ফল পাড়ব না।” শিকারি রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেল।
পরের দিন আবার যেই তারা নদীর ধারে বসেছে, অমনি এক শিকারি এসে তাদের আদর করে, মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, “তোমরা কোথায় যাচ্ছ?” রা বলল, “আমরা অন্ধবনে যাচ্ছি।” শিকারি বলল, “আরে চুপ চুপ, অন্ধরাজা শুনতে পেলেই সর্বনাশ! ওরকম বলতে নেই—কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলবে, ‘কোথাও যাচ্ছি না, এই নদীর ধারে বেড়াচ্ছি’।” তারা বলল, “না, আমরা সত্যি কথা ছাড়া আর কোন কথা বলব না।”
তার পরের দিন তারা অন্ধবন দেখতে পেল। বনের মধ্যে অনেকখানি জায়গা ময়দানের মতো খোলা—কাঠুরেরা সেখানে জঙ্গল কেটে সাফ করেছে। সেই খোলা ময়দানে শ্বেতপুরী আর লালপুরীর রাজা শাবল দিয়ে মাটি খুঁড়ছে। তাদের দেখতে পেয়েই রাজপুত্র আর রাজকন্যা ‘বাবা, বাবা’, বলে দৌড়ে গেল। কিন্তু রাজারা তাদের দিকে ফিরেও চাইলো না। ছেলে আর মেয়ে কত বলল, কত বোঝালো, তারা সে-সব কথা কানেও নিলো না। তারা কেবল মাটি খুঁড়ছে আর নিজেরা বলাবলি করছে যে, এই জমিটা শেষ হলেই আবার বীজ আনতে যেতে হবে।
রাজপুত্র আর রাজকন্যা অনেকক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে রইলো, তারপর বিষণ্ণমুখে নদীর ধারে এসে বসলো। এমন সময়ে বুড়ো ভুষুণ্ডিকাক এসে তাদের সামনে ঘাসের ওপর বসে বলল, “কঃ কঃ,—ভাবনা কিসের, কও না শুনি।” তারা সব কথা খুলে বলল। কাক বলল, “এরই জন্য এত ভাবনা? তা হলে বলি শোন। যখন ঐ পাহাড়ের ওপর রাঙা সূর্য ডুবে যাবে, তখন মানুষেরা তাদের কাজকর্ম রেখে বিশ্রাম করবে। তখন যদি চটপট গিয়ে শাবলদুটোকে নদীর মধ্যে ফেলতে পার, তা হলেই তারা কাজের কথা সব ভুলে যাবে। তারপর তাদের সামনে গিয়ে বলবে—‘ঝরনাতলায় আপনমনে, কোথায় বুড়ি কাপড় বোনে? রুপোর তাঁতে সোনার চুল, সব কি ফাঁকি, সব কি ভুল?’ বললেই সব কথা তাদের মনে পড়ে যাবে। যা দেখছো এ-সমস্তই অন্ধরাজের ফাঁকি—সেই শিকারি সেজে তোমাদের পুরীতে গিয়েছিল, আর বনের পথে তোমাদেরও ভোলাতে চেয়েছিল। যাও, সন্ধ্যা হয়ে এলো, এখনই দৌড়ে যাও।”
তারা দুজনে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে দেখলো সূর্য্য অস্ত যায় যায়। একটু পরেই রাজারা যেমন শাবল রেখে বিশ্রাম করতে বসেছে, অমনি তারা শাবল-